উত্তপ্ত বাংলাদেশ। — ফাইল চিত্র।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ার পর কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারও গঠিত হয়েছে। তার পর এখনও পুরোপুরি শান্ত হয়নি ভারতের পড়শি দেশ। সে দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় হিংসার ঘটনা ঘটছে। অস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। তার পরই নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। লুট হওয়া সব অস্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘১৯ অগস্টের মধ্যে থানায় সব অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান করছি।’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে পালাবদল ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন হাসিনা। ভেঙে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের সংসদ। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলেছে। লুটপাট, ভাঙচুর, মারধর, খুন— কিছুই বাদ যায়নি। বিভিন্ন থানা এবং অস্ত্রভান্ডারে লুট চালানো হয়েছে। যে যেমন পেরেছেন, অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। সেই সব লুট হওয়া অস্ত্রই এখন অন্তবর্তী সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় সাখাওয়াত বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ অস্ত্র সাধারণ মানুষের হাতে কী ভাবে গেল? একটা দেশে এমন চলতে পারে না। যাঁদের কাছে নিষিদ্ধ অস্ত্র আছে, আমি তাঁদের অনুরোধ করছি সাত দিনের মধ্যে যেন থানায় তা জমা করে দেন। নিজে না হলেও অন্য কারও হাত দিয়ে অস্ত্র থানায় পৌঁছে দিন।’’ সাখাওয়াত আরও জানিয়েছেন, যদি সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না পড়ে, তবে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। লুট হওয়া অস্ত্র খুঁজতে তল্লাশি অভিযান চালানো হবে বলেও জানান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, ‘‘মারামারি করে কোনও লাভ নেই। আমরা আর কোনও মৃত্যু চাই না।’’ সাখাওয়াত জানান, দেশের পুলিশের পোশাক এবং লোগো পরিবর্তন করা হবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন পরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। সেই আন্দোলনের জেরে সোমবার বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। তার পরই বোন রেহানাকে সঙ্গী করে দেশ ছাড়েন তিনি। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই উত্তাল বাংলাদেশ। ঢাকা তো বটেই, সেই রেশ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। সেই রাতেই ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে থানার পর থানায় হামলা চলেছে বলে অভিযোগ। চলেছে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন উর্দিধারীরা।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঢাকার থানাগুলি প্রায় অচল হয়ে পড়ে। প্রায় সব থানাই পুলিশশূন্য। শুধু থানা নয়, ঢাকার রাস্তায় পুলিশের দেখা মেলেনি। ভেঙে পড়েছিল পুলিশের জরুরি পরিষেবাও। বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছিল, দেশের পুলিশি ব্যবস্থা চলছিল স্বল্প সংখ্যক লোকবলকে সঙ্গী করে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে পুলিশি পরিষেবার জরুরি হেল্পলাইন নম্বর ৯৯৯-তে ফোন করলেও পরিষেবা ঠিকঠাক মিলছে না বলে অভিযোগ। ঢাকা, কুমিল্লা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার থানা এবং অস্ত্রভান্ডার থেকে লুট হয় অস্ত্র।