মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের শাখা সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
৫ অগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ অগস্ট ইসলামী ও তাদের ছাত্র শাখাকে সন্ত্রাস যোগের কারণ দেখিয়ে নিষিদ্ধ করেন। এ দিন অন্তর্বর্তী সরকারের নোটিসে বলা হয়েছে, গোয়েন্দারা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির যোগাযোগের প্রমাণ পায়নি বলে সরকারকে রিপোর্ট দেওয়ার পরে এই দুই সংগঠনের উপর থেকে আগের সরকারের চাপানো নিষেধাজ্ঞা খারিজ করে দেওয়া হল। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের কথা জানানো হয়েছে সরকারি প্রজ্ঞাপনে।
এ দিনই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক ও বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি মত বিনিময় সভায় ভারতের প্রতি ‘বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা’-র বার্তা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে সব চেয়ে তৎপর রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। ইসলামী দলগুলিকে এক মঞ্চে শামিল করে তারা বাংলাদেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করতে চলেছে। এ জন্য বিবদমান ইসলামি দলগুলিকে নিয়ে আলাদা আলাদা করে সভা করে তাদের সমর্থন আদায় করেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। বুধবার শফিকুর বলেন, “আমরা চাই সকলে সম্মানিত প্রতিবেশী হিসেবে বাস করুক। এটা শুধু ভারত দিয়ে কথা নয়, সকলের ক্ষেত্রে আমাদের একই কথা।” জামায়াতের আমির বলেন, “আপনার স্বভাব বদলান, তা হলে প্রতিবেশী বদলানোর দরকার পড়বে না। প্রতিবেশীকে প্রতিবেশী হিসেবে মনে করুন, তাদের সম্মান প্রদর্শন করুন।”
এই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলির নেতাদের ঢালাও খুনের মামলা দেওয়ার বিরোধিতা করেন জামায়েতের আমীর। শফিকুর রহমান বলেন, “গণহারে একটা হত্যা মামলায় পাঁচশ জনকে আসামি করা হচ্ছে। এটা কতটুকু যৌক্তিক শত বার চিন্তা করা উচিত। এর আড়ালে মূল অপরাধীর বেঁচে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আর হেনস্থার জন্য, প্রতিহিংসার জন্য বহু নামী নেতার নাম মামলায় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা জুলুম করতে চাই না।” এ দিনের অনুষ্ঠানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও অভয় দেন জামায়াতের আমির। শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা বিভক্তির রাজনীতি চাই না। সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু ধারাণাটি জাতিকে বিভক্ত করে। আমার যদি এ দেশে শান্তিতে বসবাস করার অধিকার থাকে, তা হলে অন্য সব ধর্মের মানুষের একই অধিকার আছে।”
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরও এ দিন আগের সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের ঢালাও খুনের মামলা দেওয়ার বিরোধিতা করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, “এমন কোনও মামলা দেবেন না, যে মামলায় কোনও সারবত্তা থাকবে না। সব মামলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের জড়িত করা, এটাও বোধ হয় সমুচিত নয়।”
জঙ্গি নেতা জসিমুদ্দিন রহমানিকে মুক্তি দেওয়ার পরে কোনও কথা না বললেও, জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে বুধবার মুখ খুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তাঁর যুক্তি, ছাত্র আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করা এবং তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়েই শেখ হাসিনার সরকার জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছিল। এই সরকার মনে করে, এটা অন্যায় এবং অযৌক্তিক। সেই কারণেই জামায়াতে ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হল। জামায়াতের আমির ও বিএনপি নেতৃত্ব এ দিন হেনস্থার উদ্দেশ্যে আগের সরকারের নেতাদের ঢালাও খুনের মামলা দেওয়ার সমালোচনা করার পরে আসিফ নজরুলও বলেছেন, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এটা বোধ হয় উচিত নয়।”