বাংলাদেশি মডেল তথা অভিনেত্রী মেঘনা আলম। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশি মডেল তথা অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে কী কারণে আটক করা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনে গত বুধবার তাঁকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। কেন এই বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করা হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বাংলাদেশের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে। এই বিতর্কের মাঝেই রবিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মেনে নিল, মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করা ঠিক হয়নি। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, রবিবার সচিবালয় থেকে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বিতর্কের আবহে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানকেও দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।
গত বুধবার রাতে ঢাকার বসুন্ধরার বাড়ি থেকে মেঘনাকে আটক করে নিজেদের হেফাজতে নেয় ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। যখন তাঁর বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছিল, সেই সময় মেঘনা একটি ফেসবুক লাইভ করেছিলেন। সেখানে তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। যদিও পরে ওই লাইভ মুছে দেওয়া হয় ফেসবুকের পাতা থেকে। পরের দিন (বৃহস্পতিবার) রাতে ঢাকার এক আদালত মেঘনাকে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। ‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কারণ না উল্লেখ করে মেঘনাকে আটক করার ঘটনায় বিভিন্ন স্তরে আলোচনা এবং সমালোচনা শুরু হয়েছে। কোনও অপরাধের অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা না করে কেন তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন’ করা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্নও উঠেছে।
এই বিতর্কের আবহে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ঢাকা পুলিশের সদর দফতরে নিযুক্ত করা হয়েছে। নতুন গোয়েন্দাপ্রধান করা হয়েছে। ঢাকা পুলিশের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘প্রশাসনিক স্বার্থে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মেঘনাকে আটক করায় বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও করেছে বলে জানান তিনি। আসিফ বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান এবং অন্য অনেকের বক্তব্যে সচেতন আছি। আমরা শুধু এটুকু আপনাদের বলতে পারি, মডেল মেঘনা আলমের ব্যাপারে পুলিশ কিছু তদন্ত করছে এবং ওঁর বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। কিন্তু ওঁকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে, সেটা ঠিক হয়নি।” বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি, তা মানলেও কোন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
এর আগে ‘প্রথম আলো’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকি জানান, কোনও ব্যক্তি যদি এমন কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, যাতে সমাজ এবং দেশের ক্ষতি হতে পারে, সেই ক্ষেত্রে ওই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। ওই ব্যক্তিকে ক্ষতিকর কাজের থেকে বিরত রাখতে আটক করা যেতে পারে ওই আইন প্রয়োগ করে।