রাণা দাশগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।
ধর্মীয় নিপীড়ণের জেরে পড়শি দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষকে নাগরিকত্ব দিতে নয়া নাগরিকত্ব আইন এনেছে ভারত। তা নিয়ে এ বার উদ্বেগ প্রকাশ করল বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ভারতে এই নয়া আইন চালু হওয়ার ফলে, অধিকতর নিরাপত্তার আশায় বাংলাদেশ বসবাসকারী সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগে উৎসাহিত হতে পারেন এবং একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে অসম্প্রদায়িক আন্দোলনে তাঁদের অংশগ্রহণ কমতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।
ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ কতখানি রক্ষিত হবে, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে, এমনই দাবি করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ঢাকাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের লিখিত বক্তব্যে এই কথা জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি জানান, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সংখ্যালঘুদের জীবন, পরিবার ও সম্পদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল একটি গোষ্ঠী। ভারতের সংশোধিত আইন ওই গোষ্ঠীকে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, নিপীড়ন, ভূমি দখল, ধর্মান্তরকরণ অব্যাহত রেখে সংখ্যালঘুদের দেশছাড়া করতে অধিক উৎসাহী করবে। তিনি আরও বলেন, দেশত্যাগ কম বেশি অব্যাহতই রয়েছে। সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়নও চলছে। বহুত্ববাদী সমাজ থেকে বাংলাদেশ ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। এ সব সমস্যার মৌল সমাধান গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে নিহিত রয়েছে।
বাংলাদেশের গত সংসদ নির্বাচনের আগে দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার্থে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ও পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নিশ্চয়ই সেই প্রতিশ্রুতি মনে রেখেছেন, এবং দ্রুত সেই মতো পদক্ষেপ করবেন বলেও এ দিন আশা প্রকাশ করেন রাণা দাশগুপ্ত।
এ ছাড়াও, এ দিনের বিবিৃতিতে তিনি বলেন, অর্পিত সম্পত্তি আইনের অব্যাহত প্রয়োগ-অপপ্রয়োগে, সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়নে ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর এক বিশাল অংশকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। সেইসময় তাঁরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। আদমশুমারির হিসাব অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানে মোট জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু। ২০১১ সালে তা নেমে আসে ৯ দশমিক ৬ শতাংশে। অবশ্য বছরখানেক আগে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, গত ১০ বছরে ২ শতাংশ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বেড়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ছাড়াও অন্য জনগোষ্ঠীর লোকজন ভারতে আশ্রয় নিয়েছে কি না, সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য যদিও ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’-এর কাছে নেই। নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে কাজল দেবনাথ, বাসুদেব ধর, জে এল ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, মঞ্জু ধর, মনীন্দ্র কুমার নাথরাও উপস্থিত ছিলেন।