মুহাম্মদ ইউনূস। — ফাইল চিত্র।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে বার বার সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে আবার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা মনে করিয়ে দিল মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি তারা সংখ্যালঘু নির্যাতনে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশকে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজ়াদ মজুমদার শনিবার এই ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গ নির্বিশেষে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে ইউনূস সরকার। সাম্প্রদায়িক হিংসার অভিযোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও চালু করেছে। আজ়াদ জানিয়েছেন, সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলছে পুলিশ এবং প্রশাসন। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কোনও অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে বাহিনীও মোতায়েন করা হচ্ছে।
পুলিশের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন আজ়াদ। সেই পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, তাদের ঘর ভাঙচুরের ১,৭৬৯টি ঘটনা হয়েছে। পরিষদের তৈরি করা অভিযোগের তালিকা হাতে পেয়েছে পুলিশ। অভিযোগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। তাদের থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের ৪ অগস্ট থেকে সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়ে যে ১,৭৬৯ টি অভিযোগ মিলেছে, তার মধ্যে ৬২টি মামলা রুজু করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এই সব সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তের পরে দাবি করেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এই হামলার ঘটনা হয়েছে। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, সংখ্যালঘুদের উপর মোট যত হামলার ঘটনা হয়েছে, তার মধ্যে ১,২৩৪টি হয়েছে ‘রাজনৈতিক কারণে’। ২০টি হয়েছে ‘সাম্প্রদায়িক কারণে’। ১৬১টি অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
পরিষদ দাবি করেছে, ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট, যে দিন হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন, সে দিন সংখ্যালঘুদের উপর ১,৪৫২টি হামলার ঘটনা হয়েছিল। কাউন্সিলের দাবি, তার আগের দিন, ৪ অগস্ট ৬৫টি, ৬ অগস্ট ৭০টি হামলার ঘটনা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গত ৫ অগস্ট থেকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হিংসার ১৩৪টি অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। এগুলি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করছে তারা। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ৫৩টি মামলা রুজু হয়েছে। ৬৫ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, ৫ অগস্ট থেকে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় বাংলাদেশে মোট ১১৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এ সব মামলায় ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।