শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
প্রায় দু’দশক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুনের চেষ্টা করায় ১৪ ইসলামি জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনাল বাংলাদেশের আদালত। মঙ্গলবার সে দেশের বিশেষ ফাস্টট্র্যাক ট্রাইব্যুনাল-১ এই সাজা শুনিয়েছে। ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ গুলি করে দোষী সাব্যস্তদের সাজা কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে আইনি বাধা-বিপত্তি এলে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে সাজা কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
ফাস্টট্র্যাক ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মহম্মদ কামরুজ্জামান মঙ্গলবার এই সাজা শোনান। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের নৃশংস এবং ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার জন্যই দোষীদের এমন দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত। যদি না আইনি প্রতিবন্ধকতা আসে।’’
সাজাপ্রাপ্তরা সকলেই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)-এর সদস্য বলে জানা গিয়েছে। ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া এলাকায় শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় নির্বাচনী সভা ছিল হাসিনার। সভাস্থলের কাছে একটি চায়ের দোকানের পিছনে ১০০ কেজির বেশি ওজনের বোমা লুকিয়ে রেখেছিল জঙ্গিরা। প্রথমে ৭৪ কেজি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। তার পর আরও ৪০ কেজি বোমা উদ্ধার করা হয়।
প্রায় ২১ বছর আগের ওই মামলায় হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র, দেশদ্রোহ এবং বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের হয়েছিল। এত বছর ধরে প্রায় ৫০ জন রাজসাক্ষীর বয়ান অনুযায়ী মামলা এগোচ্ছিল। ২০১৭ সালে খুনের চেষ্টা মামলায় প্রথমে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৩ জনকে। ট্রাইব্যুনালের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল দোষী সাব্যস্তরা। এ বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট। অন্যদের সাজাও বহাল রাখা হয়। শুধুমাত্র ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক জনকে মুক্তি দেয় আদালত।
অন্য দিকে, হত্যার ষড়যন্ত্র এবং দেশদ্রোহ মামলায় আলাদা একটি মামলাও চলছিল। সেই মামলায় ২০০৪ সালে সেই মামলায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। ৩৪ জন রাজসাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে গত ১১ মার্চ যাবতীয় সওয়াল-জবাব শেষ হলে, ২৩ মার্চ সাজা ঘোষণার দিন ঠিক হয়। সেই মতো মঙ্গলবার সাজা শোনান ট্রাইব্যুনালের বিচারক। তবে ‘ফায়ারিং স্কোয়াড’-এ সাজাপ্রাপ্তদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন।