প্রতীকী চিত্র।
এক সঙ্গে ২০ জন তরুণকে ফাঁসির আদেশ দিল ঢাকার একটি আদালত। এই ২০ জনই বাংলাদেশের সব চেয়ে নামী ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ছাত্র এবং শাসক দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্র লীগের নেতা-কর্মী।
সহপাঠী এক তরুণকে খুনের এই মামলার রায় যেমন আলোচনার বিষয় হয়েছে, মূল অপরাধটিও বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আবরার ফাহাদ নামে ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্রটি কোনও ছাত্র রাজনীতির সাতে পাঁচে থাকত না। বিভিন্ন বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করত। তেমনই কয়েকটি পোস্টে আবরার আওয়ামি লিগ সরকারের নীতির সমালোচনা করেন। ২০১৯-এর ৬ অক্টোবর রাতে তাঁর ফেসবুক পোস্টের জবাবদিহি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে ছাত্র লীগের এক নেতার ঘরে আবরারকে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে বেশ কিছু ছাত্র লাঠি, ব্যাট ও উইকেট নিয়ে হাজির ছিল। আরবারকে তারা জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের কর্মী বলে গালাগাল দিয়ে বেদম মারতে থাকে। মারের চোটে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আরবারকে ছাত্রাবাসের সিঁড়িতে শুইয়ে রাখা হয়। সেখানে জ্ঞান ফিরে আসার পরে ওই ছাত্র জল চাইলে সেটুকুও দেওয়া হয়নি। এর পরে সেখানেই মারা যান আরবার।
এই ঘটনার পরে তদন্ত শুরু করে মারধরে অংশ নেওয়া ছাত্র লীগের ২৫ জন নেতা-কর্মীকে চিহ্নিত করে পুলিশ। ছাত্র লীগ তখন তাদের বহিষ্কার করে দায় ঝেড়ে ফেলতে চেষ্টা করে। তবে সরকার এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। পুলিশ একে একে ২২ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করতে পারলেও তিন জন এখনও ফেরার। ঢাকার ১ নম্বর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট শুনানির পরে গত ১৪ নভেম্বর রায়ের দিন নির্দিষ্ট করেছিল। কিন্তু পরে দিন পিছিয়ে এই বুধবার রায় ঘোষণা করার কথা জানান বিচারক। এ দিন ২২ জনকে আদালতে পেশ করে পুলিশ। বিচারক ২০ জন ছাত্রকে ফাঁসির রায় শুনিয়ে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর কোনও ছাত্র যাতে সহপাঠীকে এই ভাবে খুন করার সাহস না পায়— সে জন্য তিনি কঠোরতম শাস্তিই দিলেন। বাকি পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। আরবারের বাবা জানিয়েছেন, এই রায় কার্যকর হলে তবেই ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে ধরবেন। আসামি পক্ষ জানিয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চতর আদালতে আপিল করবেন।