ভারত থেকে আরও ১০০ টন চাল আমদানি করল বাংলাদেশের ইউনূস প্রশাসন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
সোমবার ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী বাংলাদেশে গিয়েছেন। দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। তার আগে রবিবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পার করে ও পার বাংলায় পৌঁছল আরও ১০০ টন চাল। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা সীমান্ত হয়ে চারটি চালবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনের প্রভাব যে বাণিজ্যের উপর পড়েনি, রবিবারের ঘটনা সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। দিল্লির সাউথ ব্লক থেকে আগেই জানানো হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না। ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলি ইমাম মজুমদারও রবিবার জানান, ভারত থেকে চাল আমদানি এবং রাজনীতিকে তাঁরা একসঙ্গে দেখছেন না।
ইউনূসের খাদ্য উপদেষ্টার মতে, বাংলাদেশে শস্য উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। ‘প্রথম আলো’র ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ঘাটতি পূরণ করাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ইউনূসের প্রশাসন। এর জন্য ভারত-সহ একাধিক দেশ থেকে চাল আমদানির কথা ভাবছে তারা। কোনও একটি দেশের উপর নির্ভরশীল না থাকতে চাইলেও, ভারত থেকে চাল আমদানি তুলনামূলক ভাবে সাশ্রয়ী বলে মনে করছে ইউনূসের সরকার। তাই মায়ানমার, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড-সহ বেশ কিছু দেশ থেকে চাল আমদানির ভাবনাচিন্তা থাকলেও ভারত থেকে চাল আমদানি চালু রাখতে চাইছে বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রক। ভারত থেকে দেড় লাখ টন চাল আমদানিতে অনুমোদন দিয়েছে সে দেশের তদারকি সরকার।
এরই মধ্যে রবিবার চলতি মরসুমে দ্বিতীয় দফায় ভারত থেকে চাল আমদানি করল বাংলাদেশ। ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, ২৬ নভেম্বর ৯৯.৯৩ টন চাল বাংলাদেশে গিয়েছে ভারত থেকে। রবিবার আরও ১০০.২২ টন চাল পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। ইউনূস সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা জানান, সে দেশে বর্তমানে ২২ লাখ টন চাল মজুত রয়েছে। তবে চাহিদার কথা বিবেচনা করে সেটিকে ৩০ লাখ টন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
একটি দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে না থাকার কথা বললেও, চাল আমদানির ক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় ভারত থেকে চাল কিনতে অনেকটা কম খরচ পড়ে বাংলাদেশের। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, মায়ানমার থেকে টনপিছু চাল আমদানি করতে বাংলাদেশের খরচ হয় ৫১৫ ডলার। ভারত থেকে আমদানি করতে টনপিছু খরচ ৪৬৭.৭ ডলার। ইকোনমিক টাইম্স-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভিয়েতনাম থেকে চাল কিনতে বাংলাদেশের খরচ হয় ৫২১ ডলার। ফলে অন্য দেশগুলির তুলনায় ভারত থেকে চাল আমদানি বাংলাদেশের জন্য লাভদায়ক। তা ছাড়া ভৌগোলিক অবস্থান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচও তুলনামূলক ভাবে কম হয় বাংলাদেশের।
ভারতের উপর একক ভাবে নির্ভরশীল থাকতে না-চাইলেও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ভারতকে যে প্রয়োজন, তা অনুধাবন করতে পারছে ইউনূসের প্রশাসন। তাই আলু, পেঁয়াজ কিংবা চাল আমদানির জন্য বিকল্প দেশের খোঁজ করলেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে অক্ষত রাখতে চাইছে তারা। বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর মতে, বর্তমানের উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দু’দেশের বাণিজ্যের উপরেও প্রভাব পড়েছে। গত প্রায় দু’-তিন মাস ধরে চলা ‘মন্দা’ বাংলাদেশকে তো প্রভাবিত করছেই, সঙ্গে স্বল্প পরিমাণে হলেও ভারতে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ভারতের বিদেশসচিব মিস্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেন বাংলাদেশের বিদেশসচিব মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন। প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক হয় তাঁদের। ওই বৈঠকেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিস্রী।
চাল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই নীতি দেখা গেলেও, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে হাসিনা আমলের বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি নিয়ে আদালতে গিয়েছে ইউনূসের প্রশাসন। সম্প্রতি ভারতকে ‘ব্যান্ডউইথ ট্রানজিট’ দেওয়ার সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। হাসিনার আমলে বাংলাদেশের ‘সামিট কমিউনিকেশনস’ এবং ‘ফাইবার অ্যাট হোম’, ভারতীয় কোম্পানি ‘ভারতী এয়ারটেল লিমিটেড’-এর সঙ্গে আখাউড়া থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ট্রানজিট সংযোগ স্থাপনের অনুমতি চেয়ে বিটিআরসিতে আবেদন করেছিল। তাতে প্রাথমিক সম্মতিও মিলেছিল। কিন্তু ইউনূসের প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে ধাক্কা খেয়েছে ‘ভারতী এয়ারটেল লিমিটেড’।