বোরখা পরার উপর বছর চারেক আগেই নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল ফ্রান্স। মঙ্গলবার তাতে সায় দিল ইউরোপের মানবাধিকার আদালতও (ইসিএইচআর)। এক মামলার রায়ে কোর্ট জানিয়েছে, নিরাপত্তা ও সামাজিক যোগাযোগ দু’টি দিক থেকেই মহিলাদের বোরখা পরা সমস্যাজনক। সুতরাং ফ্রান্সের নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ ভাবে আইনসঙ্গত।
২০১০ সালে আইন প্রণয়ন করে জনসমক্ষে মুখ-ঢাকা আবরণ পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফ্রান্সের তৎকালীন সারকোজি-সরকার। সেই নিষেধ-তালিকায় শুধু বোরখা নয়, ছিল হেলমেট এবং হুড-এর মতো মাথা ঢাকার আবরণও। এই সিদ্ধান্তের পিছনে সারকোজি সরকারের যুক্তি ছিল তিনটি। প্রথমত, মুখ ঢাকা থাকলে অনেক সময় তা নিরাপত্তা-প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয়ত, শব্দের পাশাপাশি মানুষের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম তাঁর মুখের অভিব্যক্তি। তা যদি কাপড়ের আড়ালে থাকে, তা হলে তা স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তৎকালীন সরকারের দাবি ছিল, দেশের প্রত্যেক নাগরিককে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে থাকতে উৎসাহ দেয় ফ্রান্সের সংবিধান। কিন্তু সেই একসঙ্গে থাকার পথে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই আবরণ। তবে তৃতীয় যুক্তিটির জেরেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সারকোজি। তাঁর সরকারের দাবি ছিল, ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রান্সে এ হেন আবরণের ব্যবহার আসলে এক বিশেষ ধর্মের রীতিনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া। যা কখনওই মানা যায় না।
এই আইনের বিরোধিতা করেই ইউরোপের মানবাধিকার আদালতে গিয়েছিলেন এক ২৪ বছরের ফরাসি তরুণী। ইউরোপীয় ‘কনভেনশন’-এর বেশ কিছু নিয়ম তুলে ধরে তাঁর আইনজীবী জানান, এ ধরনের আইন অমানবিক। ধর্মাচরণের স্বাধীনতা খর্ব করে এ আসলে বৈষম্য তৈরি করছে। আইনজীবী আরও জানিয়েছেন, ওই তরুণী পরিবারের বা অন্য কোনও ধরনের চাপে বোরখা পরেন না। সুতরাং তাতে বাধা দেওয়ার কোনও অধিকার সরকারের নেই।
কিন্তু ইউরোপের মানবাধিকার আদালত জানিয়েছে, এ ধরনের পর্দা একসঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে থাকার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে। কারণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে তা অন্তরায়। সুতরাং ঐক্যবদ্ধ দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ফরাসি সরকার বোরখা পরার উপর যে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, তা আইনসঙ্গত।
লন্ডনের এক স্কুলে ডাচেস অব কেমব্রিজ। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি