ইজ়রায়েলের সঙ্গে লাগাতার সংঘর্ষের মধ্যেই নতুন সঙ্কট ইরানের শিয়রে! জল্পনা, গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। এমনকি, অসুস্থতার কারণে তিনি কোমায় চলে গিয়েছেন বলেও খবর।
আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের পর ইরানের সর্বোচ্চ পদে কে বসবেন, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছে। এর মধ্যেই খামেনেইয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় খবর, সেই জল্পনার আগুনে ঘি ঢেলেছে।
সে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, তেহরান গোপনে তাদের পরবর্তী নেতা বেছে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। আর সেই দৌড়ে নাকি সবার প্রথমেই আছেন খামেনেইয়ের দ্বিতীয় পুত্র মোজতবা খামেনেই।
আবার কেউ কেউ বলছেন, মোজতবাকে ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। মোজতবাও দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন।
ইয়েনেট নিউজ়কে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে যে, ইরানকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে মোজতবাকে গোপনে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই আবহে পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব়ড় বদল আসতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু মোজতবাকে সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন এত গোপনীয়তা? অনেকের মতে, ইজ়রায়েলের সঙ্গে সংঘাতকে কেন্দ্র করে এমনিতেই ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি খুব একটা ভাল নয়।
সেই পরিস্থিতিতে নতুন নেতার নাম প্রকাশ্যে এলে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে। কারণ, বছর পঞ্চান্নের মোজতবাকে নিয়ে ইরানের সব পক্ষ সন্তুষ্ট নয়। প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা দেন না তিনি।
শোনা যায়, গত দু’বছর ধরে গোপনেই নাকি দেশের সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মোজতবা। তবে, অন্তরালে থেকেও ইরানের রাজনীতিতে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে মত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
কিন্তু খামেনেই যে অসুস্থ, তা নিয়ে জল্পনা ছড়াল কী ভাবে? এক্স হ্যান্ডলে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত পোস্ট করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। বিগত কয়েক দিন ধরে তা বন্ধ ছিল। তার মধ্যেই আবার হাসপাতালের বিছানায় খামেনেইয়ের চোখ বন্ধ করা ছবি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসতে জল্পনা আরও বাড়ে।
তবে খামেনেইয়ের অসুস্থতা বা মোজতবাকে পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে বেছে নেওয়ার জল্পনাকে একেবারেই হাওয়া দিতে রাজি নয় ইরান।
রবিবার খামেনেইয়ের এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, লেবাননে ইরানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন তিনি।
খামেনেই যে অসুস্থ নন, তা বোঝানোর জন্যই এই ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, খামেনেই যদি অসুস্থ না-ও হয়ে থাকেন, তা হলেও তিনি আর বেশি দিন ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে রাজি নন। আর তার কারণ আর কেউ নন, আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, প্রথম ট্রাম্প সরকারের আমলে কী হাল হয়েছিল ইরানের। ইরানের অর্থনীতি প্রায় শেষ হওয়ার মুখে পৌঁছে গিয়েছিল।
ট্রাম্পের আগে বারাক ওবামার জমানায় আমেরিকার সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি করেছিল ইরান। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সেই সব চুক্তি বাতিল করে দেন তিনি। ইরানের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
প্রথম ট্রাম্প সরকারের আমলে তেল বিক্রি নিয়েও বিপদে প়ড়েছিল ইরান। আন্তর্জাতিক বাজারে ইরানের তেল বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
প্রথম ট্রাম্প জমানায় ইরানের মুদ্রা রিয়ালের দামও পড়তে থাকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ইরানকে বাজারে নতুন মুদ্রা চালু করতে হয়েছিল।
পাশাপাশি, সেই সময় ট্রাম্পকে হত্যার ছক কষার অভিযোগ উঠেছিল ইরানের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে ট্রাম্প-ইরান সম্পর্ক ছিল বেশ উত্তপ্ত।
তাই মনে করা হচ্ছে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই আবার চিন্তা বেড়়েছে ইরানের। তৈরি হয়েছে ‘ট্রাম্প-আতঙ্ক’। আর তার জন্যই নাকি তড়িঘড়ি ক্ষমতার হস্তান্তর করাতে চাইছেন খামেনেই। যদিও অনেকেই মনে করছেন ‘অজানা অসুখে’ ভোগার কারণেই ক্ষমতা ছাড়ছেন খামেনেই।