—প্রতীকী ছবি।
ইরানে হামলা চালানোর মূল্য চোকাতে হবে পাকিস্তানকে! পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে এমনই হুঁশিয়ারি দিল ‘বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি’। বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মির দাবি, পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের সংগঠনের অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। তারা এই হামলার প্রতিশোধ নেবে বলেও হুঙ্কার দিয়েছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি।
উল্লেখযোগ্য, যে সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার হামলা চালিয়েছে, ২০০০ সাল থেকে সেখানে সক্রিয় রয়েছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন যা দীর্ঘ দিন ধরে পৃথক বালুচিস্তানের দাবিতে লড়ছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘পাকিস্তানকে এই হামলার মূল্য চোকাতে হবে। বালোচ লিবারেশন আর্মি চুপ থাকবে না। আমরা এর প্রতিশোধ নেব, শেষ দেখে ছাড়ব। আমরা পাকিস্তানে বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি।”
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার পাকিস্তানের বালুচিস্তানে জঙ্গি সংগঠন জইশ আল অদলের ঘাঁটিতে মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় ইরান। পাকিস্তানের উপর হামলার কথা ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে তেহরান। ইরানের বিদেশমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, ওই হামলার লক্ষ্য ছিল জঙ্গি সংগঠন জইশ অল অদল বা ‘আর্মি অফ জাস্টিস’-এর ঘাঁটি ধ্বংস করা। ইরানের দাবি, এই জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপ মূলত ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত জুড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই জঙ্গি গোষ্ঠী ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে বলেও সে দেশের দাবি। আর সেই কারণেই জইশ অল অদল সংগঠনের ঘাঁটি উচ্ছেদ করতে পাকিস্তানের ‘সবজ কোহ’ গ্রামে মঙ্গলবার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান।
এই হামলার পরেই গর্জে ওঠে ইসলামাবাদ। ইরানের হামলায় পাকিস্তানের দু’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দেয়, ‘ফল ভুগতে হবে’ ইরানকে। এর পরে বৃহস্পতিবার ইরানের উপর পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তাদের ‘মার্গ বার সরমাচার’ নামক ওই অভিযানে ‘বেশ কয়েক জন সন্ত্রাসবাদী’র মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যেই পাক হামলার কারণে ইরানের ভূখণ্ডে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের ‘আমাদের লোক’ বলে দাবি করল বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। একই সঙ্গে পাকিস্তানের ‘শেষ দেখে ছাড়া’র হুমকিও দিল সশস্ত্র গোষ্ঠী।
হামলা এবং পাল্টা নিয়ে জটিল হয়েছে পাকিস্তান এবং ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক। ইরানের হামলার পরে সেই দেশ থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করার পাশাপাশি ইরানের রাষ্ট্রদূতকে পাকিস্তানে আসতে বারণ করেছে ইসলামাবাদ। ঘটনার সময়ে তিনি পাকিস্তানের বাইরে ছিলেন। অন্য দিকে, হামলার ব্যাখ্যা চেয়ে ইরানে থাকা পাক রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরানের বিদেশমন্ত্রক।
সম্প্রতি প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস এবং ইজ়রায়েলের সংঘাতের প্রভাবে জটিল হয়েছে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে ইজ়রায়েল এবং গাজ়ার আকাশ। তার মধ্যেই আবার উত্তেজনা ছড়াল পাকিস্তান এবং ইরান। এই উত্তেজনা পুরোদস্তুর যুদ্ধে পরিণত হবে না তো? এই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার আকাশে।