করিমা বালোচ। —ফাইল চিত্র।
বালুচিস্তানে পাকিস্তানি সেনার নৃশংসতাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রখ্যাত সমাজকর্মী করিমা বালোচের রহস্যমৃত্যু কানাডায়। টরন্টোর হারবারফ্রন্ট উপকূল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে। গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই)-কে ব্যবহার করে পরিকল্পিত ভাবে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি স্বাধীন বালুচিস্তানের দাবিতে সরব হওয়া একাধিক সংগঠনের। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে কানাডার মাটিতে আইএসআই-এর বিচরণ নিষিদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৩৫ বছরের করিমা রবিবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তাঁর খোঁজে তল্লাশি অভিযানে নামে টরন্টো পুলিশ। শেষমেশ সোমবার হারবারফ্রন্ট উপকূল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। স্বামী হামাল হায়দর এবং এক ভাই করিমাকে শনাক্ত করেন। তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। করিমার মৃত্যুতে ৪০ দিন শোকপালনের ঘোষণা করেছে স্বাধীন বালুচিস্তানের দাবিতে সরব হওয়ায় ‘বালোচ ন্যাশনাল মুভমেন্ট’।
বালুচিস্তানের প্রখ্যাত সমাজকর্মীদের মধ্যে একজন করিমা। বালুচিস্তান স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (আজাদ)-এর হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ তাঁর। সংগঠনকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি পাকিস্তানের কবল থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন বালুচিস্তার গড়ার ডাক দেন তিনি। বালোচ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের প্রথম মহিলা চেয়ারপার্সনও করিমা। সংগঠনের তৎকালীন নেতা জাহিদ বালোচের অপহরণের পর সংগঠনের নেতৃত্বও তাঁর হাতে ওঠে। ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ বালোচ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনকে জঙ্গি সংগঠনের আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করে সে দেশের সরকার।
আরও পড়ুন: পটিয়ালা থেকে গাড়ি চালিয়ে সিংঘু, কৃষকদের পাশে বাষট্টির মহিলা
তার পর থেকেই পাক সেনা ও সে দেশের সরকারের হাত থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন করিমা। বন্ধুবান্ধব এবং বালোচ সমাজকর্মীদের সহায়তায় শেষমেশ ২০১৬ সালে বালুচিস্তান থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন তিনি। প্রাণে বাঁচতে কানাডায় আশ্রয় নেন। সেই সময় করিমা জানান, পাকিস্তানি সেনার হাত থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘদিন দেশে গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন তিনি। ওই বছর বিবিসি-র ১০০ জন প্রভাবশালী মহিলার তালিকায় জায়গা করে নেন করিমা।
দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেও জীবনের শেষদিন পর্যন্ত স্বাধীন বালুচিস্তানের দাবিতে সরব ছিলেন করিমা। ২০১৬ সালে রাখি পূর্ণিমার দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হন তিনি। ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করে বালুচিস্তানে পাক সেনার যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে সরব হতে আর্জি জানান। তাতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে করিমা বলেন, ‘‘আজকের দিনে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। আপনাকে বড়দাদা মনে করি। আমরা চাই, বালুচিস্তানে পাক সেনার গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরুন আপনি। বালুচিস্তানের যে সব বোনেদের ভাইয়ের কোনও খোঁজ নেই, তাঁদের হয়ে আওয়াজ তুলুন।’’
এর পর ২০১৯-এর মে মাস ইমরান খান সরকারের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনেন করিমা। দাবি করেন, বহির্জগত থেকে বালুচিস্তানকে বিচ্ছিন্ন রাখতে সেখানকার মানুষের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যথেচ্ছ হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে। সুইৎজারল্যান্ডে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনেও পাক নৃশংসতার বিরুদ্ধে সরব হন তিনি।
আরও পড়ুন: হাওয়াই দ্বীপে ফের অগ্ন্যুৎপাত, লাভা উদগীরণের ভিডিয়ো ভাইরাল
করিমার মৃত্যুতে বালুচিস্তান স্বাধীনতা আন্দোলনের ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়ে গেল বলে বিবৃতি প্রকাশ করেছে বালোচ ন্যাশনাল মুভমেন্ট সংগঠন। বলা হয়, ‘করিমার মৃত্যুতে একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেত্রীকে হারালাম আমরা। আগামী কয়েক শতকেও এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়’।