আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। —ফাইল চিত্র।
মেয়েরা ‘ফুলের মতো’। হিজাব-বিতর্কের মাঝে মুখ খুলে ফের বিতর্ক সৃষ্টি করলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই।
১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসভায় নারী অধিকার বিল গ্রহণ করা হয়েছিল। তার ৪৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত কাল সমাজে মেয়েদের ভূমিকা নিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডলে একের পর এক পোস্ট করেন খামেনেই। গোটা ইরান জুড়ে যখন হিজাব-বিরোধী আন্দোলন চলছে, সে সময়ে খামেনেইয়ের এই ‘ফুলের মতো’ মন্তব্য সমাজমাধ্যমে ঝড় তুলেছে। উঠে এসেছে মাহসা আমিনির প্রসঙ্গে। হিজাব না-পরার ‘অপাধে’ ২২ বছরের তরুণীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতি-পুলিশ। সংশোধনাগারে পুলিশের অত্যাচারে প্রাণ হারান আমিনি। খামেনেইয়ের পোস্টের পরে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ইজ়রায়েলের সরকারি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে খামেনেইয়ের পোস্টের নীচে একটি কালো হিজাব পরা তরুণীর ছবি পোস্ট করা হয়। ওই একটি ছবিই যথেষ্ট। কারণ সে ছবি আমিনির।
ইরানে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা হিজাব-বিরোধী আন্দোলন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আমিনির মৃত্যুর পরে আন্দোলন আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিল। সে সময়ে আরও কড়া হিজাব আইন আনা হয়। ঘোষণা করা হয়, প্রকাশ্য স্থানে হিজাব না পরলে কঠিন শাস্তি। কিন্তু তাতেও আন্দোলনের রাশ পুরোপুরি টানতে পারেনি ইরান সরকার। পরিণতি কী হবে জানা সত্ত্বেও সম্প্রতি এক ইরানি গায়িকা পারাসতু আহমাদি হিজাব ছাড়া পশ্চিমি পোশাকে একটি অনলাইন কনসার্টে যোগ দেন। তাঁকে ও তাঁর সঙ্গী বাদ্যযন্ত্র-শিল্পীদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তাতেও সে দিন গায়িকার স্বাধীনতার দাবি এড়িয়ে যেতে পারেনি কেউ। কনসার্টে আহমাদি বলেছিলেন, ‘‘আমি একটি মেয়ে, যে ভালবাসার মানুষগুলোর জন্য গান গাইতে চাই। এটা আমার অধিকার, সেটা উপেক্ষা করা যায় না।’’
মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে অংশ নেওয়া নিয়েও নিজের আপত্তি প্রকাশ করেছেন খামেনেই। তিনি লিখেছেন, ‘এক জন মহিলা হলেন একটি নরম ফুলের মতো। বাড়ির কাজের লোক নন। তাঁকে ফুলের মতোই দেখা উচিত বাড়িতে। একটি ফুলের যত্ন নেওয়া উচিত। তার সতেজ ভাব, মিষ্টি সুবাস পায় সকলে, বাতাসে সুগন্ধীর মতো ভাসে।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা লিখেছেন, ‘প্রায় এক শতক আগে (ইউরোপে), ওরা বলেছিল, মেয়েদেরও আর্থিক স্বাধীনতা থাকা উচিত। বিষয়টা উপর থেকে দেখলে ভাল লাগে। কিন্তু এর গভীরে কোন সত্য লুকিয়ে রয়েছে? ওদের কারখানায় শ্রমিক প্রয়োজন। ওরা মেয়েদের শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগাতে চায়। আর পুরুষদের থেকে কম পারিশ্রমিক দিতে চায়।’
খামেনেই আরও লিখেছেন, ‘পরিবারে মহিলা ও পুরুষদের ভূমিকা ভিন্ন। যেমন, কোনও পুরুষের দায়িত্ব পরিবারের ব্যয়ভার সামলানো। মহিলার দায়িত্ব সন্তানকে মানুষ করা। এর মধ্যে কোনও কাজ ছোটবড় নয়। দু’টো আলাদা গুণ। আর এর উপর ভিত্তি করে নারী ও পুরুষের অধিকার বিচার করা যায় না।’ সংবাদ সংস্থা