পরিবর্তন: যেন ক্যারামেলে ঢাকা ভ্যানিলা আইসক্রিম! অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ছাই উড়ে এসে পড়েছে ২৫০০ কিলোমিটার দূরে নিউজ়িল্যান্ডের ফ্রান্জ় জোসেফ হিমবাহের উপরে। বুধবারও সাদা ছিল এই হিমবাহ। রয়টার্স
বুধবার পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হওয়ায় হাঁফ ছেড়েছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের ভয়াবহ রূপ নিল অস্ট্রেলিয়ার দাবানল। বৃহস্পতিবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৭।
দেশটার একটা বড় অংশের মাথায় এখন কালো ধোঁয়ার মেঘ। পরিবেশবিদরা বলছেন, সেই মেঘের আকার জাপানের চেয়ে ১৫ গুণ বড়! প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে সেটি। ফিনিশ মিটিয়োরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী আন্তি লিপ্পোনেন সেই মেঘকে কল্পরূপ দিয়েছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, আইসল্যান্ড থেকে তুরস্ক— প্রায় গোটা ইউরোপকে ঢেকে ফেলার ক্ষমতা রাখে সেই ধোঁয়া। এখন তাসমান সাগর পেরিয়ে নিউজিল্যান্ড থেকেও দেখা যাচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। তার জেরে কালো হয়ে উঠছে নিউজিল্যান্ডের বহু হিমবাহ। দ্রুত গলতে শুরু করেছে বরফ। পর্যটক ও স্থানীয়দের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই ছবি। পরিবেশবিদরা বলছেন, মেঘের এই বিশালাকারেই বিপদ আন্দাজ করা যাচ্ছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় তাপমাত্রা আরও বাড়বে। দাবানলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সাউথ ওয়েলস আর ভিক্টোরিয়ার তাপমাত্রা বেড়ে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। দাপট বাড়বে ঝোড়ো হাওয়ারও। এই দুই
প্রদেশে রোজই নতুন নতুন আগুন লাগার খবর মিলছে। অন্তত হাজার খানেক উদ্ধারকর্মী এখন আগুন ঠেকাতে ব্যস্ত। এমনই এক কর্মী জেফ্রি কিটোন গত মাসে উদ্ধারকাজের সময়ে পুড়ে মারা যান। বৃহস্পতিবার
তাঁর শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান ১৯ মাসের ছেলে হার্ভে কিটোনকে দমকল বিভাগের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ভিক্টোরিয়ার লেক কনজোলায় এখনও পর্যন্ত ১৭৫টি বাড়ি পুড়ে ছাই। শহর ছেড়ে সমুদ্রের দিকে পালাচ্ছে মানুষ। সপ্তাহ খানেক আগে সপরিবার ভিক্টোরিয়ায় বেড়াতে এসেছিলেন কাই কির্শবাউম। স্থানীয় বহু মানুষের সঙ্গে আটকে পড়েছেন তিনিও। বললেন, ‘‘আপাতত সৈকতে থাকছি। বলা যায় না কখন আগুন ধেয়ে আসে। তবে সমস্যা হল, একা থাকলে জলে ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। সাঁতার জানলে বেশ কিছু ক্ষণ ভেসেও থাকা যায়। কিন্তু তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব, কী ভাবে সমুদ্রে সাঁতার কাটব তা ভাবতে পারছি না।’’
আগুনের জেরে নিউ সাউথ ওয়েলস আর ভিক্টোরিয়ার বেশ কিছু এলাকা এই মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন। সেখানে বিমান পাঠিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। মাল্লাকুটার মতো যে সমস্ত অঞ্চল উপকূলের কাছাকাছি, সেখানে জাহাজ আর নৌকা পাঠিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে নৌসেনা। বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলিতে রসদে টান পড়ায় দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। নিউ সাউথ ওয়েলসের বহু সুপারমার্কেট বন্ধ। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গেলে দোকানে কয়েক ঘণ্টা লাইন দিতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। তাই এই সব এলাকায় আকাশ বা জলপথেই খাবার, জল, জ্বালানি পাঠানো হচ্ছে।
এই বিধ্বংসী দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জঙ্গল ও বন্যপ্রাণের। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, বেশ কয়েকটি প্রজাতি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুবিজ্ঞানীদের অনুমান, পুড়ে মারা গিয়েছে অন্তত ৫০ কোটি পশু-পাখি-সরীসৃপ। তাদের মধ্যে ৮০০০ কোয়ালা। পরিবেশ সংরক্ষণ কাউন্সিলের সদস্য মার্ক গ্রাহাম পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘‘এত দ্রুত আগুন ছড়াচ্ছে যে ধীরগতির কোয়ালারা পালানোর সময় পাচ্ছে না।’’ বিপদে পশুশাবকেরাও। আগুনের ভয়ে সপ্তাহ খানেকের শাবককে ছেড়ে পালাচ্ছে মায়েরা। বেশ কিছু পশুপ্রেমী সংগঠন তাদের উদ্ধার করলেও মা ছাড়া শিশুদের কী ভাবে বাঁচানো যাবে সেই চিন্তায় মাথাচাড়া দিচ্ছে।