অ্যাস্টারিক্সের একটি বইতে করোনাভাইরাসের উল্লেখ রয়েছে।
জুলিয়াস সিজারের আমলেই ছিল করোনাভাইরাস। আর তারও মুখ ঢাকা ছিল ‘মাস্ক’-এ। করোনা-আতঙ্কের বাজারে হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে এমনই এক বার্তা। ‘উড়ো খবর’ নয়, রীতিমতো ছবি-সহ প্রমাণ দাখিল করেই এই ‘তথ্য’টি ছাড়া হয়েছে। নেটাগরিকদের কারোর অ্যাকাউন্টে এই বার্তা ভেসে আসছে জোহানেসবার্গ থেকে, তো কেউ বারাসতে বসে একই বার্তা পাচ্ছেন বসিরহাটের বন্ধুর কাছ থেকে। আর সেটা দেখে এই আতঙ্কের পরিস্থিতিতেও হাসি ফুটছে দর্শকের মুখে।
গল্পটা আসলে এই, বিশ্ববিখ্যাত কমিক অ্যাস্টারিক্সের একটি বইতে পাওয়া গিয়েছে ‘করোনাভাইরাস’-এর কথা। করোনা-হাওয়া ওঠার আগেই কী করে এই নাম ওই কমিকে উঠে এসেছিল, সেটা নিয়েই বিস্ময় বোধ করছেন হোয়াটসঅ্যাপ ইউজাররা।
২০১৭-এ প্রকাশিত অ্যাস্টারিক্স সিরিজের ৩৭তম বই ‘অ্যাস্টারিক্স অ্যান্ড দ্য চ্যারিয়ট রেস’-এর একটি চরিত্রের নাম ‘করোনাভাইরাস’। এবং সেই চরিত্রটি মুখোস পরে। এই বইয়ে জুলিয়াস জুলিয়াস সিজারের আমলে অনুষ্ঠিত এক রথচালনা প্রতিযোগিতা এবং তাতে অ্যাস্টারিক্স ও তার ছায়াসঙ্গী ওবেলিক্সের অংশগ্রহণ ও সেই সংক্রান্ত অ্যাডভেঞ্চার বর্ণিত রয়েছে। গল্প অনুসারে, জনৈক রোমান সেনেটর আয়োজন করে এক রথচালনা প্রতিযোগিতার। জুলিয়াস সিজার দাবি করেন, যেন তেন প্রকারেণ এই প্রতিযোগিতায় রোমান প্রতিযোগীকেই জিততে হবে। এই রোমান প্রতিযোগীর নামই এখানে ‘করোনাভাইরাস’।
‘অ্যাস্টারিক্স অ্যান্ড দ্য চ্যারিয়ট রেস’-এর একটি চরিত্রের নাম ‘করোনাভাইরাস’।
আরও পড়ুন: করোনার জের, ঢাকা সফর বাতিল মোদীর
অ্যাস্টারিক্স সিরিজের এই পর্বটি তার স্রষ্টা গোসিনি এবং ইউদেরজোর লিখিত নয়। এই বইটি জঁ-ইভেস ফেরির রচনা এবং এর চিত্রণ দিদিয়ের কনরাদের। তবে অ্যাস্টারিক্স সিরিজের মূল মজা থেকে মোটেই দূরে সরেনি এই বই। এই সিরিজের অন্যতম আকর্ষণ বিভিন্ন চরিত্রের বিচিত্র নামকরণ। নায়ক অ্যাস্টারিক্স ও তার ছায়াসঙ্গী ওবেলিক্সের নামই সেই প্রমাণ বহন করে। মনে রাখতে হবে, এখানে অ্যাস্টারিক্সের কুকুরের নাম ডগম্যাটিক্স, বিকট সুরে গান গাওয়া চারণকবির নাম ক্যাকোফোনিক্স। রোমান নামকরণেও গোসিনি এবং ইউদেরজো এমন কায়দা অনুসরণ করতেন যে, সেই সব নামের অন্য মানেও হয়। যেমন, জনৈক রোমান সেনাপতির নাম ‘ক্রিসমাসবোনাস’। পরবর্তী কালে ফেরি ও কনরাদ স্রষ্টাদের সেই ঐতিহ্যকেই অব্যাহত রাখেন। ফলে রোমান রথচালকের নাম ‘করোনাভাইরাস’ হতেই পারে। কিন্তু ২০১৭-এ করোনাভাইরাস এবং তার মুখে মাস্ক— এই ব্যাপারে বিস্মিত হচ্ছেন নেটাগরিকরা। তারিফ করছেন রচয়িতাদের দূরদর্শিতার। ঘনঘোর আতঙ্কের বাজারেও মানুষ তার স্বাভবিক রসবোধ অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছে দেখেও হাসি ফুটছে নেটাগরিকদের মুখে। মারণ জীবাণু করোনাভাইরাসের মতো না হলেও আপাতত বেশ ভাইরাল এই বার্তা।
আরও পড়ুন: রিপোর্ট নেগেটিভ, মুর্শিদাবাদে সৌদি ফেরতের মৃত্যু করোনায় নয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘করোনাভাইরাস’ আদৌ কোনও নতুন শব্দ নয়। এই যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তা করোনা ভাইরাসের একটা রকম মাত্র। অন্যান্য আরও কয়েক ধরনের করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব অনেক আগেই ধরা পড়েছে। তবে এ বারের মতো বিখ্যাত বা কুখ্যাত হয়নি শব্দটি।