প্রাচীনকালে তুরস্ক অঞ্চলের রাজা কিং মিডাস। গ্রিক পুরাণ অনুসারে তাঁর ছোঁয়াতেই না কি সব সোনা হয়ে যেত। ইতিহাসে এ নিয়ে অনেক কথা থাকলেও তাঁর সাম্রাজ্যের অনেক কিছুই অনাবিস্কৃত ছিল। সম্প্রতি সেই সাম্রাজ্যের কিছু নিদর্শনের খোঁজ পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
বর্তমান তুরস্কের মধ্য অঞ্চলে ওই প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। ওই এলাকার নাম তুর্কমেন কারাহয়ুক।
তুর্কমেন কারাহয়ুক অঞ্চলের এক স্থানীয় কৃষক গত বছর ওই অঞ্চলের একটি খালে বিশালাকার পাথর দেখতে পান। সেই পাথরের মধ্যে খোদাই করা ছিল বিভিন্ন ধরনের আঁকিবুকি। তা দেখে তিনি খবর দেন স্থানীয় প্রশাসনকে।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা আসতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়। প্রত্নতত্ববিদ জেমস ওসবোর্ন বলেছেন, ‘‘আমরা দেখলাম জলে ভাসছে পাথরটি। সঙ্গে সঙ্গে নেমে গেলাম কোমর জলে। পাথরের উপর লেখা দেখে পরিষ্কার হল এটি লুইয়ানে লেখা। তাম্র ও লৌহ যুগে এই এলাকায় এই ভাষার ব্যবহার হত।’’
পাথরের উপর হায়ারোগ্লিফ সম্পর্কে জানতে অনুবাদকের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। পাথরের উপর এই হায়ারোগ্লিফকে বলে স্টেলে। জানা গিয়েছে, ওই অঞ্চলে প্রাপ্ত হায়ারোগ্লিফে রয়েছে যুদ্ধ জয়ের বর্ণনা।
প্রায় তিন হাজার বছর আগে অ্যানাটোলিয়ার ফ্রিজিয়ার পরাজয়ের কথা লেখা আছে সেই পাথরে। কিং মিডাসের সময়কারও যুদ্ধের কথা ফুটে উঠেছে বলে অনুমান প্রত্নতত্ত্ববিদদের।
সেই পাথরের লেখা জানাচ্ছে, হারতাপু নামের এক রাজার থেকে এসেছিল সেই বিজয় বার্তা। অনুমান করা হচ্ছে, হারতাপুর সৈন্য মিডাসের এলাকা দখল করেছিল। সেই বার্তাই রয়েছে উদ্ধার হওয়া সেই পাথরে।
কিন্তু ইতিহাস থেকে হারতাপু সম্বন্ধে খুব কমই জানা যায়। তবে এই স্টেলে থেকে অনুমান করা যায়, তুর্কমেন-কারাহয়ুক হারতাপুর রাজধানী হতে পারে। এই এলাকার প্রায় ৩০০ একর এলাকা জুড়ে তাঁর রাজধামী বিস্তৃত ছিল।
হারতাপু নিয়ে অসবোর্ন বলেছেন, ‘‘তাঁর রাজত্বের ব্যাপারে আমাদের কোনও ধারণাই নেই। তবে লৌহ যুগে মধ্য প্রাচ্য সম্পর্কে কিছু তথ্য আমরা পেতে পারি।’’
গত বছর এই অঞ্চলে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। তার পর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এখনও অনেক খনন কার্য অনেকটাই বাকি।
কিন্তু এর মধ্যেই ইতিহাসে হারিয়ে এক সাম্রাজ্যের খোঁজ পেলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। করোনার কারণে কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেলেও, এ বছরই আন্তর্জাতিক প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দল যাবে সেখানে। চলবে খনন কার্যও।
তাই অসবোর্নের আশা, ‘‘খনন কার্য আরও ব্যাপক হারে শুরু হলে এর ভিতর প্রাসাদ, স্থাপত্যে, বাড়ি-ঘরের নিদর্শন পাওয়া যাবে।’’