২০১৫ সালে লন্ডন সফরে রাজকুমার অ্যান্ড্রুর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
নারীপাচারকারী মার্কিন ধনকুবেরের সঙ্গে বন্ধুত্বের জেরে সম্প্রতি বিপাকে পড়েছেন ব্রিটেনের রাজকুমার অ্যান্ড্রু। অথচ তথ্য বলছে, ভারতে নারীপাচার চক্রের শিকার যাঁরা, তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন অ্যান্ড্রু। সাত বছর আগে কলকাতা থেকে ঘুরে যাওয়ার পরে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত দু’বছর ধরে তাঁর ওই সংস্থায় কোনও রকম দানধ্যান করেননি তিনি। বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে আজই।
‘কি টু ফ্রিডম’ নামে ওই সংস্থাটি রাজকুমারের ওয়েবসাইটে এখনও দেখাচ্ছে। লেখা আছে, এটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলা একটি সংস্থা, যারা পাচার হওয়া মহিলাদের হাতে বানানো সামগ্রী বিক্রি করে। কিন্তু আজ এখানকার এক দৈনিকে প্রকাশিত একটি খবরে দাবি করা হয়েছে, ওই সাহায্যের প্রকল্প কেবলমাত্র খ্যাতিলাভের লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হয়েছিল। গত সপ্তাহেই যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে বিতর্কিত বন্ধুত্বের জেরে রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন অ্যান্ড্রু। সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে এপস্টিনের ম্যানসনে থাকার জন্য এতটুকু লজ্জিত নন। এপস্টিনের সূত্রে আলাপ হওয়া এক নাবালিকার সঙ্গে জোর সঙ্গে যৌন সংসর্গের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধেও। সেই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন অ্যান্ড্রু।
ওই দৈনিকটি জানিয়েছে, সেবামূলক উদ্যোগ নিয়ে ভাল ভাল কথা রয়েছে ওয়েবসাইটে। তার বাইরে ওটা আর কিছুই নয়। যে সব বিপণি ‘কি টু ফ্রিডম’-এর তৈরি সামগ্রী বিক্রি করে বলে ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, সেই বিপণিগুলোতেও এখন আর ওই সংস্থার তৈরি সামগ্রী নেই বলেই দাবি।
পারিবারিক হিংসা এবং নারীপাচার চক্রে জড়িয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যে সব মহিলা, তাঁদের জন্য ওই সংস্থা তৈরি করেছিলেন অ্যান্ড্রু। ২০১২ সালে কলকাতায় ‘উইমেন্স ইন্টারলিঙ্ক ফাউন্ডেশন’-(ডব্লিউআইএফ)-এর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। ওই দৈনিকে আজ একটি ছবিও দেওয়া হয়েছে, যাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন রাজকুমার অ্যান্ড্রু। মুখ্যমন্ত্রী যখন লন্ডন সফরে এসেছিলেন তখন তাঁকে ডব্লিউআইএফ-এর একটি চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু। মুখ্যমন্ত্রী আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন বাকিংহাম প্রাসাদের তরফেও।
অ্যান্ড্রুর সংস্থার ট্রাস্টের অ্যাকাউন্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে তাদের অ্যাকাউন্টে ৮১ হাজার ২৬৫ পাউন্ড রয়েছে। তার পরের বছর তা নেমে গিয়েছে ৩৪ হাজার ৬২৬ পাউন্ডে। গত বছর ট্রাস্ট কোনও অর্থই দেয়নি ডব্লিউআইএফ-কে। এ বছরও তা-ই। তবে রাজপ্রাসাদ সূত্রে খবর, অ্যান্ড্রুর সংস্থার মাধ্যমে আর অর্থ যায় না। খুচরো ব্যবসায়ীরা সরাসরি ডব্লিউআইএফ-কে অর্থ পাঠায়।
২০১৬ সালের অক্টোবরে ‘কি টু ফ্রিডম’-এর তৈরি স্কার্ফ পরতে দেখা গিয়েছিল ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে।
বাকিংহাম প্রাসাদের তরফে জানানো হয়েছে, ওই সংস্থাটি পারিবারিক উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল। অ্যান্ড্রুর ছোট মেয়ে রাজকুমারী ইউজিনি ওই সংস্থার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রাসাদের এক মুখপাত্র অবশ্য ওই দৈনিককে জানিয়েছেন, ডব্লিউআইএফ-এর পাশে তাঁরা
এখনও আছেন।