লন্ডনের রাস্তায় পোস্টার হাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। বুধবার। ছবি: রয়টার্স।
একের পর এক মন্ত্রী ইস্তফা দিলেও আদপেই দমছেন না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আজ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ২০১৯-এর ভোটের ফলাফল বলে দিয়েছে যে জনগণ তাঁকেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান। ফলে, ইস্তফা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
গত কাল অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ইস্তফা দেওয়ার পরে আজ ইস্তফা দিয়েছেন মন্ত্রিসভার আরও পাঁচ সদস্য। তাঁরা হলেন— নগরোন্নয়ন মন্ত্রী জন গ্লেন, ন্যায় দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া অ্যাটকিন্স, পার্লামেন্ট ও বাণিজ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ফেলিসিটি বুকান, পরিবার ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী উইল কুইন্স এবং ক্যাবিনেটের আর এক মন্ত্রী লরা ট্রট। এই পাঁচ জনের মধ্যে উইল কুইন্স জনসন-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ইস্তফা দেওয়ার পরে কুইন্স টুইটারে লিখেছেন, ‘‘ভারাক্রান্ত মনে আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। মন্ত্রিত্ব সামলানোর মতো ভাল কাজ আর হয় না। আমার উত্তরসূরিকে শুভেচ্ছা জানাই।’’ কনজ়ারভেটিভ দলের অন্দরের খবর, প্রাক্তন ডেপুটি চিফ হুইপ ক্রিস পিঞ্চারের বিষয়ে ১০, ডাউনিং স্ট্রিটের ‘মিথ্যাচারণে’ অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কুইন্স। পিঞ্চার একাধিক যৌন হেনস্থার ঘটনায় অভিযুক্ত এ কথা জেনেও মুখ বুজেছিলেন বরিস। ঘনিষ্ঠদের কাছেও বারবার মিথ্যা বলে গিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গই উল্লেখ করে কুইন্স টুইট করেছেন, ‘‘১০, ডাউনিং স্ট্রিট (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) থেকে আশ্বাস পেয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মিথ্যাচারণ করেছি। আপনার কালকের ‘ক্ষমাপ্রার্থনার’ পরে বুঝেছি যে, আমাদের যা বলা হয়েছিল তা ঠিক নয়।’’ কাল পিঞ্চার প্রসঙ্গে পার্লামেন্টে বৈঠকে ক্ষমা চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তৃতার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইস্তফা দেন সুনক ও জাভিদ।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর মন্ত্রিসভার মোট সাত জন ইস্তফা দেওয়ার পরেও আজ বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি প্রধানমন্ত্রী জনসন। পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তর অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘‘কঠিন সময়েও অবিচল থাকা এক জন প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য। আমি সেই দায়িত্বই পালন করছি। তা ছাড়া, ২০১৯-এর নির্বাচনে দেশের মানুষ আমাকে বিপুল ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছেন। যা থেকে স্পষ্ট, তাঁরা আমাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান।’’ কিন্তু তাঁর মন্ত্রিসভার অনেকেই তাঁর উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রীতি পটেলও সে দলে যোগ দিয়েছেন বলে খবর।
দেশের নতুন অর্থমন্ত্রী হয়েছেন ৫৫ বছর বয়সি নাধিম জ়াহাউয়ি। ইরাকে জন্ম কুর্দ বংশোদ্ভূত নাধিম। ন’বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে ব্রিটেনে চলে আসেন। তখন তিনি ইংরেজিও বলতে পারতেন না। বাবা পেশায় ব্যবসাদার, মা দন্ত-চিকিৎসক। ব্রিটেনের কোভিড প্রতিষেধক কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে নজরে আসেন তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উচ্চপদে থাকা নাধিম। পরে শিক্ষা মন্ত্রকেরও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, তিনিও চান বরিস ইস্তফা দিন।