হানা পিক গসলার
তিনি ছিলেন আনে ফ্রাঙ্কের অন্যতম প্রিয় বন্ধু, স্কুলে পাশাপাশি বসে ক্লাস করেছেন বেশ কিছু দিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বের্গেন-বেলসেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ঠাঁই হয়েছিল তাঁরও। পার্থক্য শুধু একটাই, রক্ষা পেয়েছিলেন হানা পিক গসলার। ৯৩ বছর পর্যন্ত পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ অনুভব করে গত ২৮ অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। আনের ডায়েরি সূত্রে যাঁকে মানুষ ‘হানেলি’ নামে চেনে।
আনে ফ্রাঙ্ক ফাউন্ডেশনের তরফে এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়ে বলা হয়েছে, আনের মতো ফ্রাঙ্ক ফাউন্ডেশনও হানার উপর ভরসা করতে পারত। তবে, তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিশদে কিছু জানানো হয়নি ফাউন্ডেশনের তরফে। আনের সঙ্গে নিজের বন্ধুত্বের কথা হানা বিস্তারিত জানিয়ে গিয়েছেন ‘মেমরিজ় অব আনে ফ্রাঙ্ক; রিফ্লেকশন অব চাইল্ডহুড ফ্রেন্ড’ বইয়ে।
১৯২৮ সালে জার্মানিতে জন্ম হানার। ১৯৩৩ সালে হিটলারের উত্থান ও সেই সঙ্গে ঘনিয়ে আসা ইহুদি বিদ্বেষ এড়াতে হানার পরিবার আমস্টারডামে চলে আসে। কাকতালীয় ভাবে, সেই একই সময় ফ্রাঙ্ক পরিবারও পা রাখে শহরে। খুব দ্রুত হৃদ্যতা গড়ে উঠেছিল দুই পরিবারের মধ্যে। আনে ও হানা একই স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। কাছাকাছি বাড়ি হওয়ায় ১৯৩৪ সালে দুই বন্ধু ও তাদের মায়েদের একসঙ্গে বাজারে যাওয়ার কথা প্রায়শই নিজের স্মৃতিচারণে বলতেন হানা।
তার পর, জার্মানির পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসেও ঘনিয়ে আসে ইহুদি বিদ্বেষ। নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে ১৯৪২ সালে বাবা, মা, দিদির সঙ্গে আমস্টারডামের এক কারখানার গুদামঘরের চোরা কুঠুরিতে আত্মগোপন করেন আনে। তখনই যোগাযোগ ছিড়ে যায় দুই বান্ধবীর মধ্যে। হানারাও তখন আত্মগোপন করতে ব্যস্ত। ১৯৪৪ সালের ৪ অগস্ট নাৎসি গেস্টাপো অফিসারের হাতে ধরা পড়ে ফ্রাঙ্ক পরিবার। বের্গেন-বেলসেন ক্যাম্পে ঠাঁই হয় তাঁদের। সেই এক ক্যাম্পেই ছিল হানার পরিবারও। ১৯৪৩ সালে ধরা পড়েন তাঁরা। ‘আরবেট মাখট ফ্রাই’-এর আড়ালে নাৎসিদের নারকীয় অত্যাচার চালানোর সেই আখড়ায় ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ দেখা হয়েছিল আনে ও হানার। দু’জনেই তখন পনেরো ছুঁইছুঁই, দু’জনেই তখন কিশোরী। তার ঠিক এক মাস পরেই টাইফাসে মৃত্যু হয় আনের। হানার পরিবারের মধ্যে বেঁচে ছিলেন কেবল তিনি ও তাঁর দিদি গ্যাবি। স্মৃতিচারণে হানা জানিয়েছিলেন, ক্যাম্পের দুটি আলাদা অংশে তাঁরা থাকতেন। মাঝে ছিল কাঁটাতার। হানাকে দেখে আনে কেঁদে ফেলেছিল। জানিয়েছিল, সে একা। নাৎসিরা অন্যদের মতো আনের মাথার চুলও কামিয়ে দিয়েছিল। আনে নিজের চুলের প্রতি যত্নশীল ছিল খুবই। ব্যথিত হানা অনুভব করেছিলেন বান্ধবীর কষ্ট।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ক্যাম্প থেকে মুক্তি পান হানা। জেরুসালেমে নার্স হিসাবে নতুন করে জীবন শুরু করেন তিনি। বিয়ে করেন ওয়াল্টার পিককে। তাঁর পরিবারে রয়েছে, তিন ছেলে, ১১ জন নাতি-নাতনি ও তাঁদের ঘরের আরও ৩১ জন সন্তান। আনে ফ্রাঙ্ক ফাউন্ডেশন সূত্রে খবর, হানা বলতেন, তাঁর এই পারিবারিক বন্ধনই হিটলারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর জবাব। সংবাদ সংস্থা