অ্যানা মে ওংয়ের নাম কিছু দিন আগেও অনেকে শোনেননি। প্রায় একশো বছর আগে হলিউডের অভিনেত্রী ছিলেন। আজ এত বছর পরে আবার তিনি শিরোনামে। কারণ, আমেরিকার মুদ্রায় প্রথম যে এশীয় বংশোদ্ভূতের প্রতিকৃতি দেখতে পাওয়া যাবে, সেটি তাঁর। ইতিহাসে অবদান আর সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নানা সময়কালের নানা পেশার, নানা জাতির মহিলাদের ছবি এ বছর থেকেই স্থান পাচ্ছে মুদ্রায়। আজ অ্যানার ছবি দেওয়া কোয়ার্টার অর্থাৎ পঁচিশ পয়সার মুদ্রা টাঁকশাল থেকে বেরোনো শুরু হল।
অ্যানা যখন হলিউডের পর্দায় আবিভূর্ত হচ্ছেন, চিন থেকে সে দেশে আইনি অভিবাসন অনেক দিন হল বন্ধ। চিন থেকে আসা মানুষজনের বসবাস করাটাও সহজ ছিল না তখন। প্রতিভা আর সৌন্দর্য সত্ত্বেও অনেক বৈষম্য আর অন্যয়ের সঙ্গে লড়তে হয়েছে এশীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান এই অভিনেত্রীকে। অ্যানার মতো যাঁদের দেখতে, তখনকার চলচ্চিত্রে তাঁদের ‘ভিলেন’ বা প্রান্তেবাসীর ভূমিকা ছিল বাঁধাধরা। অ্যানাও সেই গণ্ডির বাইরে বেরোতে পারছিলেন না। ড্রাগন লেডি বা দাসীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘‘কেন এমন বাঁধা গতে ফেলা হয় এশীয়দের?’’, তিরিশের দশকে একটি সাক্ষাৎকারে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। উদারচেতা অভিনেত্রী হলিউড ছেড়ে পাড়ি দেন ইউরোপে— অন্য দেশে, অন্য ভাষায় অভিনয় করবেন বলে। জার্মান, ফরাসি, ব্রিটিশ সিনেমায়, লন্ডন বা নিউ ইয়র্কের থিয়েটারে আর ছোট পর্দায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। সব বাধা তুচ্ছ করে অভিনয় করেছেন ষাটটির বেশি ছায়াছবিতে।
আজ বহু বছর পরে হাতের মুঠোয় অ্যানার মতো অল্প-চেনা বা অচেনা মহিলাদের প্রতিকৃতি নতুন প্রজন্মকে কৌতূহলী করছে। নারী অধিকারের আন্দোলনও পাচ্ছে শিকড়ের জোর। মুদ্রায় স্থান পাচ্ছেন মায়া অ্যাঞ্জেলুর মতো কিংবদন্তি কবি, প্রথম আমেরিকান মহিলা মহাকাশচারী স্যালি রাইড, আমেরিকান জনজাতির মহিলাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যাওয়া উইলমা ম্যানকিলার, নিউ মেক্সিকোর মহিলাদের ভোটাধিকার আন্দোলনের পুরোধা নীনা ওটেরো ওয়ারেনের মতো মহিলারা। যাঁরা পথ দেখিয়েছেন, লড়েছেন, হাল ছাড়েননি।