ভিডিয়ো বার্তায় রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। রয়টার্স
নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনির মধ্যেই ছিল ফস্কা গেরো। রবিবার পুলিশ জানিয়েছে, বড়দিনে লন্ডনের উইনসর প্রাসাদের নিরাপত্তা বলয় ডিঙিয়ে কী ভাবে চত্বরে ঢুকে পড়েছিল উনিশ বছরের সশস্ত্র এক তরুণ, সে রহস্য ভেদ হয়েছে। গত কাল প্রাসাদ চত্বর থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল ওই তরুণকে। বড়দিনের মরসুমে খোদ রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের সঙ্গে ওই দুর্গে উৎসব উদ্যাপন করছেন যুবরাজ চার্লস, তাঁর স্ত্রী ক্যামেলিয়া এবং রাজপরিবারের আরও কয়েক জন সদস্য। তাঁরা সবাই সুরক্ষিত রয়েছেন।
কোভিডের বাড়বাড়ন্তের জন্য ৯৫ বছর বয়সি রানি এ বছর বাতিল করেছেন নরফোকের স্যানড্রিংঅ্যাম এস্টেটের বড়দিনের সাবেক উৎসব। বর্ষ-বদলের সময়টা দক্ষিণ পূর্ব ইংল্যান্ডের উইনসর প্রাসাদেই কাটাচ্ছেন। টেমস ভ্যালি এবং মেট্রোপলিটান পুলিশের আধিকারিকেরা জানান, তরুণকে জেরা করে তাঁরা জেনেছেন যে, সে সাউদ্যাম্পটনের বাসিন্দা। তার পরিচয় জানানো হয়েছে রাজপরিবারকে।
টেমস ভ্যালি পুলিশের সুপারিন্টেনডেন্ট রেবেকা মিয়াজ় জানান, ওই তরুণ আপাতত পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা লঙ্ঘন করে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়া এবং ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ সঙ্গে রাখার। রেবেকা বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, ছেলেটি মাটিতে পা রাখার মুহূর্তেই সতর্কতা-ব্যবস্থাপনা সজাগ হয়ে গিয়েছিল। সে আর কোনও ভবনে ঢুকতে পারেনি।’’ তাঁর দাবি, সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় আঁচ পড়ার মতো বড় কিছু এর পিছনে নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে, তির-ধনুকের মতো কিছু নিয়ে ওই তরুণকে দেখতে পেয়েছিলেন নজরদারি ক্যামেরায় চোখ রাখা আধিকারিকেরা। তার পরেই তাঁকে ধরা হয়। তবে অস্ত্রটি কী, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি পুলিশের তরফে। খোলসা করা হয়নি, তিনি ঠিক কোথায় ছিলেন আর খাস দুর্গের কতটা কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। শুধু বলা হয়েছে, তাঁর সঙ্গে ছিল ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’।
শনিবার সম্প্রচারিত আগে থেকে রেকর্ড করে রাখা ভিডিয়ো বার্তায় রানি উল্লেখ করেছেন সদ্যপ্রয়াত স্বামী প্রিন্স ফিলিপের কথা। গত এপ্রিলে ৯৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন ফিলিপ। রানি বলেন, ‘‘আপনাদের দুঃখ আমি বুঝি। কারণ আমিও এ বছর আমার ৭৩ বছরের জীবনসঙ্গীকে হারিয়েছি।’’ সাধারণত সংযত রানির এই অকপট বার্তায় চমকিত দেশবাসী। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথম যখন তাঁকে দেখি, সেই চনমনে জিজ্ঞাসু-চাহনিটা শেষ পলক পর্যন্ত একই রকমের উজ্জ্বল ছিল।’’
পরিবারের কথা বলতে গিয়ে রানি উল্লেখ করেছেন হ্যারি ও মেগানের কন্যাসন্তান লিলিবেটের কথাও। এ বছরই জন্মেছে রানির এই প্রপৌত্রী। দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের পৌত্র হ্যারি এ বছর গোড়ায় তাঁর পরিবার নিয়ে রাজপরিবার থেকে আলাদা হয়েছেন। হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগান গত বছর রাজকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে সরে দাঁড়িয়ে সংসার পেতেছেন আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ায়। রাজপরিবারের সঙ্গে তাঁদের ঝামেলার বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে শিরোনামে। সেই প্রেক্ষিতে লিলিবেটকে ‘পরিবারে স্বাগত’ জানিয়ে রানির এই বার্তায় ফের জল্পনা শুরু হয়েছে, তা হলে কি রাজকীয় বরফ গলছে?
সব মিলিয়ে রানির বড়দিনের উদ্যাপন নিয়েই সরগরম ব্রিটেনের সংবাদ ও সমাজমাধ্যম।