—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গণঅভ্যুত্থানের পরে ঢাকা সফরে এসে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করলেন আমেরিকার প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের বিদেশসচিব জসীম উদ্দিন তার পরে সাংবাদিক বৈঠকে জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করে তাতে সহায়তা করতে চেয়েছে আমেরিকা। নতুন সরকারের দেশগঠনেও সহযোগিতা করতে চায় বাইডেন সরকার। ‘ইউএসএড’ সংস্থার মাধ্যমে ২০ কোটি ডলার সাহায্য দিচ্ছে আমেরিকা, যা নতুন সরকার কাঠামোগত সংস্কার এবং উন্নয়নের কাজে লাগাতে পারবে। তবে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ দফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই অর্থসাহায্য আমেরিকা করেছে আগের হাসিনা সরকারের সঙ্গে ২০২১ সালে হওয়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আলোকেই। পুরনো চুক্তিতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ৪২ কোটি ডলার সাহায্য আগের সরকারকে করেছে আমেরিকা। আমেরিকার কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছিল হাসিনা সরকার। এ দিন অর্থায়নকারী ‘ইউএসএড’-এর সঙ্গে ২ বছরের একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশে যাওয়ার আগে আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী বিদেশ সচিব ডোনাল্ড লু দিল্লিতে ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে টানা কয়েক দিন বৈঠক করে যান। দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই বৈঠকে নানাবিধ দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিও আলোচ্য ছিল। ভারতের আশঙ্কা, সরকার পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে যেমন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন বেড়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে, একই সঙ্গে হিযবুত তাহরীর ও অনসারুল্লা বাংলা টিম-এর মতো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলির তৎপরতা বেড়েছে— যা গোটা উপমহাদেশের নিরাপত্তার পক্ষে চ্যালেঞ্জ। দিল্লি হয়ে ঢাকায় আসা আমেরিকার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে কি না, সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বিদেশসচিব জসীম উদ্দিনকে। বিদেশসচিব জানিয়ে দেন, আমেরিকার সঙ্গে তাঁদের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে। তিনি বলেন, “ভারতে আমাদের হাই কমিশন রয়েছে। ঢাকাতেও ভারতের হাই কমিশন রয়েছে। আমরা যদি দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে চাই, এগুলিই আমাদের প্ল্যাটফর্ম।” খানিকটা কঠোর ভাবেই জসীম উদ্দিন বলেন, “এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কোনও আলোচনা করাটা রীতিবিরুদ্ধ। শুধু এ আমলে নয়, আগের আমলেও তাই হয়েছে। আমি অন্তত এমন আলোচনা কখনও হতে দেখিনি।”
এ দিন আমেরিকার সহকারী বিদেশ সচিব লু-কে ইউনূস জানান, আগের ‘স্বৈরাচারী সরকার’ বিদায় নেওয়ার পরে কয়েক সপ্তাহ হল তাঁরা সরকার গঠন করেছেন। নির্বাচনী জালিয়াতি আটকানো, অর্থনীতিকে সচল করা, বিচার বিভাগ ও পুলিশ ব্যবস্থার মতো রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক বিষয়গুলি সংস্কারে ইতিমধ্যেই ৬টি কমিশন গঠন করেছেন। অর্থনীতির স্বাস্থ্য ফেরানোও বড় চ্যালেঞ্জ তাঁদের কাছে। ইউনূস অভিযোগ করেন, আগের সরকারের প্রভাবশালীরা বিপুল অর্থ আমেরিকা ও অন্যত্র পাচার করেছে। এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে। আমেরিকার সরকার যেন এই কাজে তাঁদের সহযোগিতা করে।