প্রতীকী ছবি
ভারতের পরে চিনা-অ্যাপে খড়্গহস্ত এ বার আমেরিকাও। উপভোক্তাদের অন্ধকারে রেখে তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতানোর অভিযোগে সম্প্রতিই চিনা ভিডিয়ো-অ্যাপ টিকটকের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো। গত কাল খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, টিকটক নিষিদ্ধ করতে আজকের মধ্যেই বিশেষ প্রশাসনিক নির্দেশে সই করতে চলেছেন তিনি। আজ স্মার্টফোন সংস্থা অ্যাপলও তাদের চিনা অ্যাপ স্টোর থেকে ২৬ হাজার গেমিং অ্যাপ-সহ প্রায় ৩০ হাজার অ্যাপ সরিয়ে দিয়েছে বলে খবর। সংখ্যালঘু উইঘুরদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে গত কালই শিনজিয়াং প্রদেশের একটি চিনা সংস্থা ও ক্ষমতাসীন দলের দুই শীর্ষ নেতাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে আমেরিকা।
আর এই আবহেই একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, সোমবারের মধ্যে টিকটকের আমেরিকা শাখা কিনতে চলেছে বিশ্ববিখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফ্ট। কথাবার্তা প্রায় পাকা। শুধু সই-সাবুদ আর লেনদেন বাকি।
লাদাখ-সংঘর্ষ পরবর্তী অধ্যায়ে জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে টিকটক-সহ ১০৬টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে ভারত। গোড়া থেকেই দিল্লির এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে ট্রাম্পের প্রশাসন ও মার্কিন কংগ্রেসের একটা বড় অংশ। চিনকে করোনার উৎস হিসেবে ধরে নিয়ে এবং অতিমারি তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে গোড়া থেকেই সরব ছিলেন ট্রাম্প। সম্প্রতি আবার মার্কিন কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ ওঠে, টিকটককে হাতিয়ার করেই আমেরিকার আগামী ভোটে নাক গলাতে চাইছে চিন। ট্রাম্প নভেম্বরের ভোটে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের শরণ নিয়েছেন বলে তারও অনেক আগে নিজের বইয়ে বোমা ফাটিয়েছিলেন ট্রাম্পেরই প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন। তাই টিকটক নিষিদ্ধ করা নিয়ে ক্রমশ চাপ বাড়ছিল ট্রাম্পের উপর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কাল সাফ বললেন, ‘‘শীঘ্রই নিষিদ্ধ করতে চলেছি টিকটিককে। তার বদলে অনেক কিছু নিয়েই কথা চলছে। বিকল্পের সন্ধানে আছি আমরা।’’ মাইক্রোসফ্টের হাত ধরেই কি সেই বিকল্প আসছে— এই জল্পনা সঙ্গী করেই আমেরিকায় ফের জমে উঠেছে ডিজিটাল স্পেস দখলের লড়াই। বিশেষত এমন একটা সময়ে, যখন অবৈধ ভাবে বাজার দখল করা নিয়ে কংগ্রেসে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল ও অ্যামাজ়নের চার সিইও।
আরও পড়ুন: সময়েই ভোট হোক, মতবদল ট্রাম্পের
কাল রাতে প্রকাশিত এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, টিকটকের কেনাবেচা নিয়ে চিনা সংস্থা বাইটড্যান্সের সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ের কথাবার্তা চলছে সত্য নাদেল্লার সংস্থা মাইক্রোসফটের। হোয়াইট হাউসের প্রতিনিধিও শামিল তাতে। সূত্রের খবর, কয়েকশো কোটি ডলারের ওই বাণিজ্য চুক্তি সোমবারের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে। এমনকি আর্থিক লেনদেনও। এ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে নাদেল্লার সংস্থা অবশ্য মুখ খোলেনি।
আরও পড়ুন: বেজিংয়ের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার ডাক পম্পেয়োর
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, টিকটকের সাজানো বাজারের উপর নজর ছিল ফেসবুক-হোয়্যাটসঅ্যাপের মালিক মার্ক জ়াকারবার্গেরও। টিকটক অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্য মাইক্রোসফটের আইনি জটিলতাই সবচেয়ে কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কোন ক্ষমতায় ট্রাম্প টিকটক নিষিদ্ধ করতে চলেছেন, তা স্পষ্ট নয়। আর তা করতে গিয়ে তিনি কতখানি বাধার সম্মুখীন, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।