লন্ডনে খুনের আসামিকে ‘হিরো’ বলছেন রানি থেকে মেয়র, ক্রুদ্ধ আম্যান্ডার পরিবার

পুলিশ জানাচ্ছে, ২০০৩ সালে খুন হয়েছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণী আম্যান্ডা। সেই খুনে দোষী সাব্যস্ত জেমসকে ২০০৪-এ কমপক্ষে ১৫ বছরের জন্য কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৯
Share:

জেমস ফোর্ড এবং আম্যান্ডা চ্যাম্পিয়ন। ফাইল চিত্র

এলোপাথাড়ি ছুরি চালাতে চালাতে তখন লন্ডন ব্রিজের উপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল হামলাকারী উসমান খান। সেই সময়ে কয়েক জন পথচারীই ঝাঁপিয়ে পড়ে আততায়ীকে ধরাশায়ী করে। হাত থেকে কেড়ে নেন ছুরিটি। তাঁদের মধ্যেই ছিল ৪২ বছরের জেমস ফোর্ড। পুলিশ বলছে, ওই পথচারীরা সাহস করে উসমানকে না রুখলে আরও বাড়তে পারত নিহতের সংখ্যাটা। লন্ডনবাসীর চোখে সে দিন থেকেই ‘হিরো’ জেমসরা।

Advertisement

যদিও আম্যান্ডা চ্যাম্পিয়নের পরিবারের কাছে জেমস খুনি ছাড়া আর কিছুই নয়। পুলিশ জানাচ্ছে, ২০০৩ সালে খুন হয়েছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণী আম্যান্ডা। সেই খুনে দোষী সাব্যস্ত জেমসকে ২০০৪-এ কমপক্ষে ১৫ বছরের জন্য কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। শুক্রবার, অর্থাৎ হামলার দিনই জেল থেকে সাময়িক ভাবে মুক্তি পেয়েছিল সে। ফিশমঙ্গার’স হলে বন্দিদের পুনর্বাসন নিয়ে সেমিনারে সেদিন উপস্থিত ছিল জেমসও। তার পরের ঘটনা সকলেরই জানা।

শুধু অজানা জেমসের অন্ধকার অতীত। খুন হওয়ার সময়ে আম্যান্ডার বয়স ছিল ২১। তবে তাঁর মানসিক বয়স ছিল পনেরা বছরের কিশোরীর মতো। পুলিশ জানিয়েছে, আম্যান্ডার গলা কাটার আগে তাঁর শ্বাসরোধ করেছিল জেমস। তিন সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পরে কেন্টে আম্যান্ডাদের বাড়ির কাছেই উদ্ধার হয় ওই তরুণীর পচাগলা দেহ। সেই সময়ে পুলিশ বলেছিল, জেমসের অপরাধ ‘উদ্দেশ্যহীন ও নির্বোধের মতো’। সে সমাজের জন্য ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। পুলিশ এ-ও জানায়, আম্যান্ডাকে খুনের পরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় ফোন করে অপরাধের কথা স্বীকার করে জেমস। সংস্থার এক সদস্য পুলিশকে সব জানায়।

Advertisement

শুক্রবার কেন্ট পুলিশ আম্যান্ডার বাড়িতে ফোন করে জানায়, জেমসকে সাময়িকভাবে জেল থেকে ছাড়া হয়েছে। তাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয় নিহতের পরিবার। আম্যান্ডার পিসি অ্যাঙ্গেলা কক্সের কথায়, ‘‘ও হিরো হতে পারে না। ও একজন খুনি যাকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এবং আমরা আগে থেকে এর কিছুই জানতাম না। ও একজন প্রতিবন্ধী মেয়েকে খুন করেছে।’’

শুক্রবারের লন্ডনের ‘ত্রাতা’দের ঢালাও প্রশংসা করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ, জরুরি পরিষেবার কর্মী ও প্রত্যেক সাহসী পথচারী, যাঁরা হামলাকারীকে রুখেছে তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁর অন্যের জীবন বাঁচাতে নিঃস্বার্থভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’’ লন্ডনের মেয়র সাদিক খানও বলেন, ‘‘যাঁরা আমাদের বাঁচাতে নিজেরা বিপদের দিকে ছুটে গিয়েছেন, তাঁদের সাধুবাদ জানাই।’’

যদিও বাড়ির মেয়ের খুনি জেমসকে কোনও কৃতিত্বই দিতে রাজি নন অ্যাঙ্গেলা। তিনি বলেছেন, ‘‘ও কিছুই করেনি। ও শুধু ওখানে ছিল। আর তাতেই আজ হঠাৎ হিরো হয়ে গেল। অথচ, ও-ই ঠান্ডা মাথায় একটা অসহায় মেয়েকে কোনও কারণ ছাড়া খুন করেছে। ফলে ও এখন কী করল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’’

আম্যান্ডাকে কেন খুন করেছিল তা কখনওই স্বীকার করেনি জেমস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement