অ্যামান্ডা গোরম্যান
মাস দু’য়েক আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে নিজের লেখা-পাঠ করা কবিতায় ‘একতা ও সাম্যের’ কথা বলেছিলেন তিনি। ২২ বছরের তরুণী অ্যামান্ডা গোরম্যানের ‘দ্য হিল উই ক্লাইম্ব’ সেই সময়ে সাড়া ফেলেছিল গোটা বিশ্বে। গত শুক্রবার সেই কৃষ্ণাঙ্গ কবিরই পিছু ধাওয়া করে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন নিরাপত্তা রক্ষী।
কেন? টুইটারে আফ্রিকান-আমেরিকান কবি জানিয়েছেন, তাঁর চেহারা বিশেষ সুবিধার ঠেকেনি শ্বেতাঙ্গ রক্ষীর। ‘সন্দেহজনক’ মনে হওয়ায় অনুসরণ করেন অ্যামান্ডাকে। এবং সন্দেহ ভাঙলেও ক্ষমা মাত্র না চেয়ে বিদায় নেন।
জানুয়ারিতে বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের পরে ২০১৭ সালে ‘ন্যাশনাল ইউথ পোয়েট লরেট’ খেতাব জেতা অ্যামান্ডাকে নিয়ে নতুন করে হইচই শুরু হয়। আমেরিকায় প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কবিদের মধ্যে আমান্ডাই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
সঞ্চালিকা ওপরা উইনফ্রে, প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসদের প্রশংসা কুড়িয়ে নিজের পরিচয় দিতে অ্যামান্ডা বলেছিলেন, ‘‘আমি এক রোগা কালো মেয়ে। আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্রীতদাস। একলা মায়ের কাছে মানুষ এই আমিই প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখি।’’
এ বার এই অ্যামান্ডাই বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ তুলে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের জীবনে এটাই বাস্তব। এক দিন আমাদের আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হয়, আবার পরের দিনই আমাদের ভয় পায় মানুষ।’’ ক্যাপিটল হিলে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার প্রসঙ্গ ছিল অ্যামান্ডার কবিতায়। তিনি লিখেছেন, ‘‘গণতন্ত্র কখনও কখনও দেরিতে আসতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্রকে কখনওই পাকাপাকি ভাবে পরাস্ত করা যাবে না।’’
গত শুক্রবার নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনায় অ্যামান্ডা লিখেছেন, ‘‘এক নিরাপত্তা রক্ষী আজ আমায় বাড়ি পর্যন্ত অনুসরণ করে আসেন। আমি যে সেখানেই থাকি, সেটা তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি বলেছেন, ‘আমায় দেখতে সন্দেহজনক’। আমি আমার চাবি দেখাই এবং নিজের বাড়িতে ঢুকে যাই। এর পরে তিনি ক্ষমা না চেয়েই বিদায় নেন।’’
নিউ ইয়র্কে ৯ বছরের এক কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরীর উপরে পেপার স্প্রে ছেটানোর প্রসঙ্গ টেনে লেখা পুরনো একটি টুইটও শেয়ার করেন তরুণী কবি। ফেব্রুয়ারির সেই টুইটে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমরা এমন এক বৈষম্যমূলক সমাজে বাস করি যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে কবিকে নিয়ে হইচই হয় আবার ন’বছরের মেয়ের গায়ে পেপার স্প্রে দেওয়া হয়। আমাকে দেখুন। সেই সঙ্গে দেখুন আরও অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকে, যাঁদের অদৃশ্য করে রাখা হয়েছে। আমি একা কখনও উঠে দাঁড়াতে পারব না, উঠবও না।’’
শুক্রবার তাঁর দ্বিতীয় টুইটে অ্যামান্ডা লেখেন, ‘‘সে অর্থে দেখলে তিনি (নিরাপত্তা রক্ষী) হয়তো ঠিকই। হ্যাঁ আমি ভয়ের কারণ বা হুমকিই বটে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে হুমকি, অসাম্যের বিরুদ্ধে, উপেক্ষার বিরুদ্ধে হুমকি। যে-ই সত্যি বলবে এবং আশায় ভরসা করে এগোয়, সে-ই ক্ষমতার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।’’