বৃহস্পতিবার এক দিনে ৯৮ হাজার মানুষের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে ইটালিতে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বা সন্দেহ হলেই পরীক্ষা করাতে বলছে সরকার। র্যাপিড টেস্ট করাতে ভিড় রোমের এক করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রে। কোয়রান্টিন থাকার দিন-সংখ্যা কমানোর কথা ভাবছে ইটালি। না হলে গৃহবন্দির সংখ্যা ২০ লক্ষ ছাড়াবে বলে আশঙ্কা সরকারের। ছবি পিটিআই।
গত সাত দিন ধরে গোটা বিশ্বে শীর্ষ ছুঁয়েছে করোনা সংক্রমণ। রয়টার্সের সমীক্ষা অনুযায়ী, ওমিক্রনের গতিবিধি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থনীতি বাঁচিয়ে সংক্রমণ রোখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রগুলি। কিন্তু কার্যত ব্যর্থ তারা। ওমিক্রনের জেরেই বিশ্বের করোনা চিত্রের এই অবস্থা। ডিসেম্বরের ২২ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে গোটা বিশ্বে দৈনিক সংক্রমণ ধরা পড়েছে গড়ে ৯ লক্ষ। ভীষণই খারাপ পরিস্থিতিতে ইউরোপের একাধিক রাষ্ট্র (ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইটালি), আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং অবশ্যই আমেরিকা।
এখনও পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে, করোনার ডেল্টা বা অন্যান্য স্ট্রেনের তুলনায় ওমিক্রনের মারণ ক্ষমতা অনেকটাই কম। কিন্তু তা হলেও সংক্রমণ যদি এত বেশি বেড়ে যায়, হাসপাতালগুলিতে শয্যার অভাব দেখা দেবে। লাগাতার লকডাউন চললে, ব্যবসা, অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। এমনিতেই গত দু’বছরে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সব দেশের অর্থনীতি। কিন্তু সংক্রমণ আটকাতে গেলে লকডাউন ছাড়া উপায় দেখতে পাচ্ছে না সরকার। কারণ টিকার দু’টো ডোজ় নেওয়ার পরেও ওমিক্রন সংক্রমিত হচ্ছেন অনেকে। এমনকি তিনটি ডোজ় নেওয়ার পরেও সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ব্রিটেনে।
ইউরোপ এই মুহূর্তে করোনার ভরকেন্দ্র হয়ে রয়েছে। একাধিক দেশে লকডাউন জারি করা হয়েছে। কিন্তু এতে রাষ্ট্রনেতারা চিন্তায়। বহু মানুষ ঘরবন্দি। অতিমাত্রায় লোক সংক্রমিত হলেও কোয়রান্টিন হতে হবে। এতেও রোজগার বন্ধ হয়ে একটি শ্রেণি দারিদ্রের মুখে পড়ছে। সরকার থেকে সাহায্য করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ব্রিটেন ও ফ্রান্সে। কিন্তু কত দিন!
স্পেন আজ জানিয়েছে, কোয়রান্টিন থাকার সময়সীমা ১০ দিন থেকে ৭ দিন করা হবে। ইটালিও বিচ্ছিন্নবাসে থাকার নিয়ম কিছুটা লঘু করার কথা ভাবছে। কোভিড সংক্রমিতদের সংস্পর্শে আসা সকলকে আলাদা থাকার যে নিময়, তার সময় কিছুটা কমানো হবে। আমেরিকাও একই কথা ভাবছে। তারা ঠিক করছে, সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে পাঁচ দিন বিচ্ছিন্নবাসে থাকতে হবে। আগে ১০ দিন থাকতে হত কোয়রান্টিনে। অবশ্য রোগী উপসর্গহীন হলে তবেই এই নিয়ম কার্যকর করা সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রোস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘ওমিক্রন নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। একে তো মারাত্মক সংক্রামক এটি। তার মধ্যে ডেল্টা থাকাকালীনই ওমিক্রন ছড়াচ্ছে। সংক্রমণ ঢেউ নয়, বিষয়টা সুনামি হয়ে যাচ্ছে।’’
ফ্রান্সে আরও বেড়েছে সংক্রমণ। মঙ্গলবার ১ লক্ষ ৮০ হাজার মতো ছিল দৈনিক সংক্রমণ। বুধবার আরও বেড়ে দৈনিক সংক্রমণ দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৮ হাজার। ব্রিটেন, ইটালি, স্পেন, পর্তুগাল, গ্রিস, সাইপ্রাস, মল্টাতেও দৈনিক করোনা সংক্রমণ রেকর্ড গড়ছে। ব্রিটেনে বুধবার ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৭ জনের করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছে।
আমেরিকাতে গড় দৈনিক সংক্রমণ আড়াই লক্ষ ছাড়িয়েছে। এ সপ্তাহে গড়ে দৈনিক সংক্রমণ ধরা পড়েছে ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৩১২ জনের। এর আগে এমন দৈনিক সংক্রমণ ছিল জানুয়ারিতে, ২ লক্ষ ৫০ হাজার ১৪১। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-র ডিরেক্টর রোশেল ওয়ালেনস্কি জানিয়েছেন, সুখবর একটাই, সংক্রমণ যে হারে বেড়েছে, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু সেই তুলনায় কিছুই নয়। সংক্রমণ বেড়েছে ৬০ শতাংশ, কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। দিনে গড়ে ৯ হাজার জন ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। মৃত্যু কমেছে ৭ শতাংশ, দিনে গড়ে ১১০০।