ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে নিহত সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ। ফাইল ছবি।
সাংবাদিকরা ভেবেছিলেন, তাঁরা অন্তত নিরাপদ! কিন্তু কে জানত, সেই সাংবাদিকদের তাক করেই ছুটে আসবে একের পর এক গুলি। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে আল জাজিরা টিভি-র সাংবাদিক শিরিন আবু আলেখের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। আমেরিকার সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে, ইজরায়েলি সেনার নিশানা করে ছোড়া গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে শিরিনের।
গত ১১ মে, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজরায়েলি সেনার আগ্রাসনের খবর করতে আরও কয়েক জন সাংবাদিকের সঙ্গে জেনিন শহরে যান শিরিন। সেখানেই ভোরবেলা গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তার পর থেকেই কার গুলিতে শিরিনের মৃত্যু হল, তা নিয়ে ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইনের মধ্যে শুরু হয় চাপানউতর। প্যালেস্টাইন শুরুতেই দাবি করেছিল, ইজরায়েলি সেনার গুলিতেই মৃত্যু হয়েছিল শিরিনের। কিন্তু ইজরায়েল পাল্টা দাবি করে, প্যালেস্টাইনের গুলিতেই প্রাণ গিয়েছে সাংবাদিকের। এ নিয়েই অন্তর্তদন্তে নামে আমেরিকার দৈনিক। তাতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিবেদনটি বলছে, ইজরায়েলি সেনার কনভয় থেকেই নিশানা করে মারা হয়েছিল গুলি। সেই সময় সাংবাদিকদের ওই দলের ধারেকাছে কোনও প্যালেস্টিনীয় সেনা ছিলেন না। তা হলে কেন নিশানা করে সাংবাদিককে মারা হল— প্রশ্ন উঠছে।
সাংবাদিক হিসেবে পশ্চিম এশিয়ায় শিরিন ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। গত দু’দশক ধরে ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্বের খবর করছিলেন আমেরিকায় জন্ম নেওয়া এই প্যালেস্টিনীয় সাংবাদিক।আমেরিকার সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জেনিনের বাসিন্দা এক ব্যক্তির বয়ানকে। সালিম আওয়াদ নামে ওই ব্যক্তি বলেছেন, ‘‘গুলির আওয়াজ পেয়ে আমি সাংবাদিক দলের উদ্দেশে প্রশ্ন করি, কেউ কি আহত হয়েছেন? দেখি কিছু দূরে শিরিন মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। আমি চিৎকার করে ডাকতে থাকি, ‘শিরিন শিরিন!’ বুঝতে পারি, শিরিন আর নেই।’’ জানা গিয়েছে, কিছু দূরের একটি জায়গায় ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে গুলি বিনিময় থামার খবর পেয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নিতে যাচ্ছিল সাংবাদিক দলটি। তখনই আচমকা ইজরায়েলি কনভয় থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে। তাতেই মৃত্যু হয় শিরিনের।
ইজরায়েলের কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, যদি তাঁদের সেনার বন্দুক থেকেই গুলি ছোড়া হয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে কোনও প্যালেস্টিনীয় সেনাই ছিলেন তার লক্ষ্য। সাংবাদিকরা নন। কিন্তু ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর এক মাস ব্যাপী অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে, শিরিনদের ধারেকাছে কোনও প্যালেস্টাইনের সেনা ছিলেন না। অর্থাৎ একটা বিষয় পরিষ্কার, শিরিনদের নিশানা করেই গুলি চালানো হয়েছিল। এবং গুলি এসেছিল ইজরায়েলের সেনা কনভয় থেকেই।