গণিতজ্ঞ: অক্ষয় বেঙ্কটেশ
মঞ্জুল ভার্গবের পরে অক্ষয় বেঙ্কটেশ। ২০১৪-য় দক্ষিণ কোরিয়ার সোলের পরে ২০১৮ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো। গণিতের নোবেল পুরস্কার হিসেবে যা খ্যাত, সেই ‘ফিল্ডস মেডেল’-এর তালিকায় আর একটি ভারতীয় নাম। তবে, শুধুই নাম, এ বার যিনি ফিল্ডস মেডেল পেলেন, সেই অক্ষয় অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।
জন্ম নয়াদিল্লিতে। বয়স যখন দু’বছর, তখন মা-বাবা চলে যান অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে। মা শ্বেতা কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ, এখন ওই বিষয়ে অধ্যাপিকা। বাবার বিষয়ও তা-ই। অক্ষয়ের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজের প্রথম পাঠ অস্ট্রেলিয়াতেই। তার পরে অবশ্য ঠিকানা আমেরিকা। প্রিন্সটন, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-তে গবেষণার পরে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপক। এই মুহূর্তে প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি-তে ভিজ়িটিং প্রফেসর তিনি। ওই শিক্ষায়তনই একদা ঠিকানা ছিল আলবার্ট আইনস্টাইন, কার্ট গোয়েডেল বা জন ফন নয়ম্যানের মতো প্রতিভার। অবশ্য, এ মাসের মাঝামাঝি অক্ষয় পাকাপাকি ভাবে যোগ দিচ্ছেন ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডি-তেই।
শৈশবেই নজরকাড়া প্রতিভা। মাত্র ১১ বছর বয়সে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে মেডেল। পরের বছরেই, বয়স ১২ না পেরোতেই, ম্যাথমেটিকস অলিম্পিয়াডে মেডেল। আজ পর্যন্ত আর কোনও অস্ট্রেলীয়র ভাগ্যে জোটেনি এমন সম্মান।
প্রত্যেক চার বছর অন্তর ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথমেটিক্যাল ইউনিয়ন-আয়োজিত গণিতজ্ঞদের বিশ্ব সম্মেলনে দেওয়া হয় ফিল্ডস মেডেল। এ বছর রিও শহরে আয়োজিত ওই সম্মেলনে ফিল্ডস পেলেন চার গণিতজ্ঞ।
গণিতে নেই কোনও নোবেল পুরস্কার, সে জন্য এই শিরোপার সঙ্গে জুড়ে থাকে নোবেল নামটি। তবে, নোবেলের সঙ্গে এর ফারাক এই যে, ও পুরস্কার পেতে বয়সের বাধা নিষেধ নেই। আর ফিল্ডস পেতে বয়স অবশ্যই ৪০-এর কম হওয়া দরকার। যেমন, অক্ষয়ের বয়স এখন ৩৭।
জিনিয়াস মিথ-টা অক্ষয়ের ঘোর অপছন্দ। ওঁর মতে, ওই মিথটা অযথা মহত্ত্ব আরোপ করে কোনও কোনও গবেষকের ঘাড়ে। যেন, তিনি একাই করে ফেলছেন সবটা। আসলে, গবেষণা মানে বহু মানুষের কাঁধে চাপা। এই যেমন, ওঁর নিজের কাজও দাঁড়িয়ে আছে অঙ্কের তথাকথিত অনেক জিনিয়াসের কৃতকর্মের উপরে।
মিতবাক অক্ষয় অসম্ভব লো-প্রোফাইল। ‘এমন আর কী করেছি’, এই ভাবখানা ওঁর আচরণে সর্বদা প্রকট। পদার্থবিদ্যা থেকে যখন প্রেম পাল্টে গেল গণিতে, তখনও ভাল লাগেনি অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতা। গণিতে বেশি দূর এগোবেন না ভেবে এক সময়ে গবেষণা ছেড়ে চাকরি নেওয়ার কথাও ভেবেছেন। বিখ্যাত গণিতজ্ঞ পিটার শারনাক ওঁকে বুঝিয়েছিলেন, ওঁর মধ্যে কী প্রতিভা লুকিয়ে আছে।
বহুধা-বিভক্ত গবেষণায় অক্ষয়ের প্রিয় বিষয়, ‘নাম্বার থিয়োরি।’ ১, ২, ৩ ইত্যাদি সংখ্যার নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ কিংবা অন্বেষণ। এ বিষয়ে বিখ্যাত এক ধাঁধাঁর নাম ‘রিম্যান হাইপোথিসিস।’ মৌলিক সংখ্যা (২, ৩, ৫, ৭ ইত্যাদি) বিষয়ে। যে ধাঁধাঁর সমাধানে ঘোষিত হয়েছে ১০ লক্ষ ডলার পুরস্কার। না, অক্ষয় সল্ভ করেননি সেই পাজ়ল। তবে, অনেকের অনুমান, ওঁর প্রদর্শিত পথে মিলবে সেই সমাধান।