ফাহিম দাস্তি এবং আহমেদ মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত।
পঞ্জশির উপত্যকার বিস্তীর্ণ এলাকা তালিবানের কব্জায় এলেও লড়াই চালাতে বদ্ধপরিকর ‘ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (নর্দার্ন অ্যালায়েন্স)-এর নেতা আহমেদ মাসুদ। সোমবার এক ভিডিয়ো বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনও পঞ্জশিরে তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছি। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত চালিয়ে যাব।’’
সোমবার সকালে খবর আসে তালিবান বাহিনী খুন করেছে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের মুখপাত্র ফাহিম দাস্তিকে। তার কিছুক্ষণ পরেই নেটমাধ্যমে ওই ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করেন মাসুদ। এমনকি, তালিবান মুখপাত্র জবিরুল্লা মুজাহিদ দাবি করেন পঞ্জশিরে মাসুদের বাড়িরও দখল নিয়েছেন তাঁরা। এই দাবির পক্ষে ছবি এবং ভিডিয়োও প্রকাশ করে তালিবান। তাতে দেখা যায় মাসুদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তালিবান যোদ্ধারা।
দাস্তির পাশাপাশি, পঞ্জশিরে সোমবার তালিব বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন মাসুদের আত্মীয় আমির সাহিব আহমেদ মাসুদ এবং নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের অন্যতম কমান্ডার সাহিব আব্দুল ওয়াদুদ জোহর। ভিডিয়ো বার্তার মাসুদ বলেছেন, ‘‘পঞ্জশিরে পাকিস্তান সেনা তালিবানের হয়ে লড়ছে। তারাই আমার পরিজন এবং ফাহিমকে খুন করতে তালিবানকে সাহায্য করছে।’’
আফগানিস্তানে পাক বাহিনী এবং তার দোসর তালিবানের অত্যাচার দেখেও আন্তর্জাতিক মহল নীরব কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন মাসুদ। তিনি বলেছেন, ‘‘গোটা বিশ্ব জানে পাকিস্তানই তালিবানের মদতদাতা। তবুও কেউ কিছুই বলছে না।’’
প্রসঙ্গত, মাসুদের বাবা আহমেদ শাহ মাসুদ প্রায় আড়াই দশক আগে তালিবান বিরোধী নর্দার্ন অ্যালায়্যান্স-এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময়ও পঞ্জশিরের দখল নিতে পারেনি তালিবান। ২০০১-এ টুইট টাওয়ার হামলার দু’দিন আগে সাংবাদিকের ছদ্মবেশে আল কায়দার মানববোমা হামলায় তিনি নিহত হয়েছিলেন।
মাসুদের বাড়ির সামনে তালিবান বাহিনী।
ঘটনাচক্রে, মাসুদের এই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা আগেই রক্তপাত এড়াতে তালিবানের সঙ্গে আলোচনার বার্তা দিয়েছিল নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। পঞ্জশিরে তালিবান বিরোধী লড়াইয়ের আর এক মুখ, আফগানিস্তানের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেহ্ দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে বলে সোমবার দাবি করেছে তালিবান। যদিও তা খারিজ করে ভিডিয়ো-বার্তায় সালেহ্ জানিয়েছেন, তিনি পঞ্জশিরেই রয়েছেন।
বস্তুত, পাক বায়ুসেনার ধারাবাহিক বিমানহানা এবং তালিবান-পাক যৌথ বাহিনীর অভিযানে পঞ্জশির উপত্যকার জনবসতিগুলি হাতছাড়া হলেও এখনও মাসুদের তাজিক যোদ্ধারা হিন্দুকুশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন বলে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে। সেখান থেকে তালিবান বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘকালীন গেরিলা যুদ্ধও চালাতে পারেন তিনি। ঠিক যেমন ঠিক যে রণকৌশলে আশির দশকে সোভিয়েত সেনার মোকাবিলা করেছিলেন ‘সিনিয়র মাসুদ’।