ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে বৈঠক করলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। ছবি: সংগৃহীত।
গৃহযুদ্ধের সময় তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে শ্রীলঙ্কা সরকারের দিকে। চলতি মাসেই রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদ (ইউএনএইচআরসি)-এ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এ নিয়ে এক প্রস্তাবে ভোটাভুটি হবে। সেই গুরুত্বপূর্ণ ভোটের আগে শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে বৈঠক করলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, দু’দেশের শীর্ষনেতার মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা। তবে মনে করা হচ্ছে, ইউএনএইচআরসি-তে ভোটাভুটির আগে ভারতকে নিজের দিকে টানতেই এই পদক্ষেপ শ্রীলঙ্কার। অনেকের ধারণা, ভোটাভুটির সময় প্রস্তাব নাকচ করতে ভারতের ‘সাহায্য প্রার্থনা’ করেছে শ্রীলঙ্কা।
১৯৮৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে নিহত হন ৮০ হাজারেরও বেশি এলটিটিই (লিবারেশন টাইগার্স অব তামিন ইলম) জঙ্গি। তার মধ্যে বেশির ভাগই শ্রীলঙ্কার তামিল সম্প্রদায়ভুক্ত। গৃহযুদ্ধের সময় ওই তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ইউএনএইচআরসি-র চলতি ৪৬তম অধিবেশনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। আগামী ২২-২৩ মার্চে ওই প্রস্তাবে ভোটাভুটি হওয়ার কথা। পাশাপাশি, শ্রীলঙ্কাকে কেন্দ্র করে নানা বিষয়ও উত্থাপন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ১২ মার্চ ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানি, মন্টেনেগ্রো-সহ ইউএনএইচআরসি-র একাধিক সদস্য দেশ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই খসড়া প্রস্তাব পেশ করে। এর পর চূড়ান্ত খসড়া বেশ কয়েকটি বিষয়ও যুক্ত করা হয়। মানবাধিকার ছাড়াও ওই খসড়ায় শ্রীলঙ্কার সমস্ত প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের কথাও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সংবিধান ১৩তম সংশোধনী মেনে শ্রীলঙ্কার প্রতিশ্রুতি মতো ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে ভারত-শ্রীলঙ্কার চুক্তির ফসল ওই ১৩তম সংশোধনী। ভারত বরাবরই বিভিন্ন মঞ্চে ওই সংশোধনীর প্রয়োগ নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এ নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের ভারত সফরেও দু’দেশের আলোচনা হয়েছিল।
এই আবহে ভারত-শ্রীলঙ্কার সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি, রাজাপক্ষের দেশের বন্দরে চিন এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মিলিত ভাবে ইস্ট কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছিল ভারত। তবে সেই উদ্যোগে সায় দেয়নি রাজাপক্ষে সরকার। ভারত যে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রুষ্ট, তা বুঝিয়ে দিয়েছিল ইউএনএইচআরসি প্রধান মিশেল বাচালের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনায় ডাকা এক বৈঠকে। তাতে ১৩তম সংশোধনীর পূর্ণ প্রয়োগের প্রসঙ্গ তুলেছিল ভারত।
এই আবহে ইউএনএইচআরসি-র প্রস্তাবে প্রাদেশিক পরিষদের প্রতি শ্রীলঙ্কার সরকারের বিরুদ্ধে দায়বদ্ধতার অভাব-সহ মানবাধিকার ভঙ্গের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। সূত্রের খবর, মোদীর সঙ্গে টেলিফোনে বৈঠকের উদ্যোগ শ্রীলঙ্কার তরফে শুরু করা হয়। মোদীর সঙ্গে আলোচনায় নানা প্রসঙ্গের পাশাপাশি খসড়া প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত-সহ ইউএনএইচআরসি-র সমস্ত সদস্য দেশের কাছেই ভোটাভুটির সময় ওই প্রস্তাব নাকচের আর্জি জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, খসড়া প্রস্তাব ছাড়াও দু’দেশের নেতার মধ্যে উপকূলবর্তী অঞ্চলে উন্নয়ন নিয়ে পর্যালোচনা এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্তরে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।