আইএসআইএস-এর প্রকাশ করা ভিডিওর একটি দৃশ্য।
দুই মার্কিন সাংবাদিকের পর এ বার ব্রিটিশ ত্রাণকর্মীর মুণ্ডচ্ছেদ করল জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া)। শনিবার সেই ভিডিও পোস্ট করা হয় ইন্টারনেটে। পশ্চিম এশিয়ায় জঙ্গি-দৌরাত্ম্য ঠেকাতে আমেরিকার পাশাপাশি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ‘বাড়াবাড়ি’ রুখতেই যে এই হুমকি তা-ও ভিডিওটিতে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা।
‘আ মেসেজ টু দ্য অ্যালিস অব ইউএস’ নামে দু’মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ডেভিড হেইনস নামে ৪৪ বছরের ওই ত্রাণকর্মীকে হত্যার আগে কাগজে লেখা একটি বয়ান পড়তে বাধ্য করে জঙ্গিরা। সেই বয়ানে ডেভিডের মৃত্যুর জন্য সর্বৈব ভাবে দায়ী করা হয় ব্রিটিশ প্রশাসনকে। যে ভাবে টোনি ব্লেয়ারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্যামেরনও জঙ্গি-বিরোধে নেমেছেন তার ফল ভাল হবে না বলেও ওই বয়ানে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। যে জনশূন্য পটভূমিতে মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলি এবং স্টিভেন সটলফকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই একই পটভূমিতে খুন করা হয়েছে ডেভিডকেও। আগের দু’টি ভিডিও-র মতোই এখানেও দিনের আলো রয়েছে।
ডেভিডকে হত্যা করেই যে তারা রণে ভঙ্গ দিচ্ছে না, তা জাহির করতে আর এক অপহৃত ব্রিটিশ নাগরিক অ্যালেন হেনিংয়ের ছবি দেখিয়ে তাঁকে ‘পরবর্তী শিকার’ বলে ঘোষণাও করেছে জঙ্গিরা। তাৎপর্যপূর্ণ, এই ভিডিওতে হত্যাকারীর মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা হলেও তার কথায় ব্রিটিশ টান স্পষ্ট। ভিডিও শেষে জেহাদির সতর্কবার্তা, “ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে লড়তে পেশমেরগা বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করে তুমি যে ভুল করেছিলে, এই লোকটাকে তার দাম দিতে হল।”
এই ভিডিও প্রকাশের পর আইএসআইএস-কে পাল্টা সতর্কবার্তা দিতে ছাড়েননি ক্যামেরনও। তিনি জানান, ‘শয়তানদের এই কাজের’ বদলা নেবেন তিনি। খুনিদের খুঁজে বার করতে সব রকম চেষ্টার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমেরিকা এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করছে। ডেভিডের পরিবার এবং ব্রিটিশ নাগরিকদের সমবেদনা জানাই। এই কঠিন সময়ে আমরা সব রকম ভাবে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রের পাশে আছি।”
ডেভিডের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন ক্যামেরনও। বিবৃতির পাশাপাশি আজ দু’টি টুইটও করেছেন ক্যামেরন। লিখেছেন, “যত সময়ই লাগুক না কেন, আমরা ওই হত্যাকারীদের খুঁজে বার করবই।” ডেভিডের ভাই মাইক হেইনস আজ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে সিরিয়ার আতমে-র একটি ত্রাণ শিবিরে কাজ করতে যান ডেভিড। সেখানেই জঙ্গিরা তাঁকে অরহরণ করে। মাইকের কথায়, “গত এক বছর ধরে ডেভিদের ৪ বছরের মেয়ে বাবাকে খুঁজে যাচ্ছে। কোনও রকমে ভুলিয়ে রেখেছিলাম। এখন ওকে কী জবাব দেব জানি না।” সূত্রের খবর, কাল গভীর রাতে এই ভিডিও প্রকাশের খবর পেয়ে মধ্যরাতেই অফিসে চলে আসেন ক্যামেরন। আজ সকালের দিকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একটি বিশেষ বৈঠক করেন তিনি। তার পরেই প্রাশাসনের তরফে একটি বিবৃতিতে ডেভিডের হত্যার খবর ঘোষণা করা হয়। জানানো হয়, জঙ্গিদের প্রকাশ করা ভিডিওটি আসল। ডেভিডকে হত্যা করার তীব্র নিন্দা করে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট জানিয়েছেন, জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে আমেরিকা এবং ব্রিটেনের পাশে দাঁড়াতে চায় অস্ট্রেলিয়া। পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ বিমান এবং সেনা পাঠানোর কথাও জানান তিনি।
সম্প্রতি শেষ হওয়া ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে জঙ্গি নিধনের সিদ্ধান্তে আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়েছে ব্রিটেন। ইরাক ও সিরিয়ায় পৌঁছেছে ব্রিটিশ যুদ্ধবিমানও। জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে ব্রিটিশ নাগরিকেরা দেশ ছেড়েছেন তাঁদের প্রতিও কঠোর হয়েছে সরকার। আমেরিকার পাশাপাশি ব্রিটেনকেও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোয় প্রায় নিয়মিতই হুমকি দিচ্ছে জেহাদিরা। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সমর্থন জোগাড় করতে পশ্চিম এশিয়া পৌঁছেছেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। আজ, মিশর ও তুরস্ক প্রশাসনের কাছে সমর্থনের আর্জি জানিয়েছেন কেরি। তিনি বলেন, “ইসলামের সঙ্গে আইএসআইএস-এর কোনও সম্পর্ক নেই। তাদের এই বর্বরতার বিরোধিতা করছে বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো। আমি একের পর এক মুসলিম রাষ্ট্রের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি, যারা সবাই এই জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরোধী।”
দিনে ৩০ লক্ষ ডলার আয় জঙ্গিদের
অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এক সময়ে ইরান এবং আরবের দেশগুলোর উপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল এই জঙ্গিরা এখন তেল চুরি, নারী পাচার, অপহরণ করে দিনে প্রায় ৩০ লক্ষ ডলার আয় করে। মার্কিন সূত্র জানাচ্ছে, এর আগে বিশ্বের কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে এই বিশাল পরিমাণ অর্থ আসেনি। আর তাতেই আশঙ্কিত মার্কিন গোয়েন্দারা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতে থাকায় আইএস জঙ্গিরা যে কোনও দিন আমেরিকাতেও হামলা চালাতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের এক আধিকারিক।