ফাইল চিত্র।
পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের এক— ‘মাচু পিচু’। আন্দিজ় পর্বতের মাথায় সুনিপুণ ভাবে তৈরি ইনকাদের এই শহর দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক পাড়ি দেন পেরু। যদিও মাচু পিচু আবিষ্কারের একশো বছর পরে জানা যাচ্ছে, নামটাই ভুল। ইনকারা এ শহরকে ডাকত ‘হুয়ানা পিচু’। ‘নাওপা পাচা: জার্নাল অব দ্য ইনস্টিটিউট অব আন্দিয়ান স্টাডিজ়’-এ প্রকাশিত হয়েছে রিপোর্টটি।
গবেষকদের মধ্যে অন্যতম, ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপক ব্রায়ান বাওয়ার জানিয়েছেন, তাঁদের অনুমান, ইনকাদের বাস ছিল ১৪২০ সাল নাগাদ। ইনকা সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল কুজ়কো। এখানেই বাস করত রাজপরিবার। পরবর্তীকালে ইনকা সাম্রাজ্যের দখল নেয় স্প্যানিয়ার্ডরা। পরাজিত ইনকারা ক্রমশ হারিয়ে যায়। একা পড়ে থাকে তাঁদের হুয়ানা পিচু। ক্রমশ অজানার ভিড়ে হারিয়ে যায় এ শহরও। আন্দিজ় পর্বতে লুকিয়ে থাকা এই শহরের কথা মানুষ জানতই না শতকের পর শতক। ১৯১১ সালে তাকে আবিষ্কার করেন হিরাম বিংহাম। তিনি-ই নাম দেন মাচু পিচু। বিংহামের গাইড ছিলেন মেলচোর আর্তেগা। পেশায় স্থানীয় চাষি। আর্তেগা যা বলেছিলেন, তাঁর কথার ভিত্তিতে ওই নাম রেখেছিলেন বিংহাম।
বাওয়ারের ধারণা, এখানেই ভুল হয়ে গিয়েছিল বিংহামের। তিনি জানিয়েছেন, নতুন গবেষণায় কিছু তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তাতে ধরা পড়েছে শহরের আসল নাম আলাদা। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রকের ইতিহাসবিদ ডোনাটো আমাডো গঞ্জালেস। তিনিও স্বাধীন ভাবে মাচু পিচু নিয়ে গবেষণা করছিলেন। দু’জনের তথ্য মিলিয়ে দেখেন ঠিকই, এ শহরের নাম হুয়ানা পিচু।
বাওয়ার এ-ও জানিয়েছেন, বিংহামের নোটবুকে লেখা ছিল, শহরের নাম নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত নন। বস্তুত, এই তথ্য পেয়েই বাওয়াররা নতুন করে মানচিত্র ঘাঁটতে শুরু করেন। বিংহামের আবিষ্কারের আগের ও পরের, দু’সময়ের মানচিত্রই পরীক্ষা করে দেখেন তাঁরা। এ ভাবে খোঁজখবর করতে-করতে তাঁদের হাতে আসে একটি নথি। ১৫৮৮ সালের ওই রিপোর্টে লেখা ছিল, ভিলকাবামবা অঞ্চলের জনজাতিরা ‘হুয়ানা পিচু’-তে ফিরতে চান। সাদার্ন ইউটা ইউনিভার্সিটির নৃতত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপক এমিলি ডিন জানিয়েছেন, পেরুর আদি ভাষা ‘কেচুয়া’-তে হুয়ানা শব্দের অর্থ নতুন বা তরুণ। পিছু-র অর্থ পর্বতশৃঙ্গ। ও দিকে, মাচু শব্দের অর্থ প্রাচীন। অর্থাৎ এ শহরকে এতদিন বলা হত ‘প্রাচীন পর্বতশৃঙ্গ’। কিন্তু এটি আসলে নতুন পর্বতশৃঙ্গ। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই ভুল হওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। বিদেশি গবেষকদের কেউ কেচুয়া ভাষা বুঝতেন না। তাঁরা জায়গার নাম নিয়ে তেমন গবেষণাও করেননি।
বাওয়ারের বক্তব্য, আসল নাম জানতে পারা গেলেও ‘মাচু পিচু’ নামটাই রেখে দেওয়া হোক। ডিনেরও বক্তব্য, ‘‘হাজার হাজার বই, পত্রপত্রিকা, বিজ্ঞাপন, আইনি নথি, এ সবে মাচু পিচু নামটা লেখা রয়েছে। পরিবর্তন করতে হলে সব বদলাতে হবে। এর কোনও প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া, পেরুর মানুষও এই নামটিকে সামদরে গ্রহণ করেছে।’’ তবে নাম-বদল না-ই হোক, ইনকা সভ্যতার ইতিহাসে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।