ছবি পিটিআই।
কন্দহরে নিহত ভারতীয় চিত্রসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির বাবাকে আজ ফোন করে সমবেদনা জানালেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। পরে প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে এক বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে তালিবান-আফগান বাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কর্মী দানিশ। আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে যুদ্ধ-পরিস্থিতির খবর ও ছবি পাঠাচ্ছিলেন তিনি। সেই ঘটনার পরের দিন দানিশের দেহ আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের হাতে তুলে দিয়ে তালিবান জানিয়েছিল, সাংবাদিকের মৃত্যুতে তারা দুঃখিত। আর আজ আফগান প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘‘কন্দহরের স্পিন বোল্দাক এলাকায় তালিবানের হামলায় ভারতীয় সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির মৃত্যুতে আফগান প্রেসিডেন্ট মর্মাহত। আজ তিনি দানিশের বাবাকে ফোন করে তাঁর শোকবার্তা জানিয়েছেন। দানিশের বাবা প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’’
কূটনীতিকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের নিজস্ব শোকবার্তা আফগান সরকারের তরফে ‘সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা’ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তাই দানিশের বৃদ্ধ পিতা, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আখতার সিদ্দিকিকে এ ভাবে ফোন করে আফগান প্রেসিডেন্ট আসলে নয়াদিল্লিকে বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন। আমেরিকান ও ন্যাটো বাহিনী সে দেশ থেকে চলে যাওয়ার ফলে এখন যথেষ্ট বেকায়দায় আফগান সেনাবাহিনী। দেশের অর্ধেক এলাকার দখল নিয়ে নিয়েছে তালিবান। এই পরিস্থিতিতে কাবুল চায়, দিল্লি তাদের সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করুক। তালিবান দাবি করেছে, তাদের গুলিতে নয়, আফগান বাহিনীর গুলিতেই নিহত হয়েছেন দানিশ। তাই কোনও ভাবেই যেন এই ঘটনা ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কে ছায়া না-ফেলে, তা নিশ্চিত করতে এখন তৎপর গনি প্রশাসন।
আজ আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, স্পিন বোল্দাকে হামলা চালানোর সময়ে শতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে তালিবান। তা ছাড়া, তারা ব্যাপক লুটপাটও চালিয়েছে। প্রশাসন সূত্রকে উদ্ধৃত করে একটি আফগান সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, স্পিন বোল্দাকের মতো যে সব এলাকা তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে, সেই সব এলাকা থেকে কম বয়সি ছেলেদের জোর করে তালিবান বাহিনীতে যোগ দেওয়ানো হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র মিরওয়াইজ় স্টানেকজ়াইয়ের কথায়, ‘‘এ থেকেই স্পষ্ট, তালিবান কতটা ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর। ক্ষমতা দখলের জন্য তারা সাধারণ মানুষকে হত্যা করতেও পিছপা হয় না।’’
আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নিলেও আফগান বাহিনীকে এখনও সাহায্য করে চলেছে আমেরিকা। পেন্টাগন জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন তালিবান ঘাঁটির উপরে আকাশ পথে হামলা চালাচ্ছে আমেরিকা। ‘‘এ ধরনের হামলা এখন চালিয়ে যাওয়া হবে,’’ শুক্রবার বলেছেন আমেরিকান সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাকেনজ়ি।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় এখন সতর্ক রয়েছে তার প্রতিবেশী দেশগুলিও। গতকালই বড়সড় সামরিক মহড়া চালিয়েছে তাজিকিস্তান। গত কয়েক দিনে আফগান সীমান্তের কাছে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিগুলিতে সেনা ও অস্ত্রের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে মস্কোও।