ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফের সুর চড়াল আশরাফ গনি প্রশাসন। আজ আফগান প্রেসিডেন্ট গনির ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’, সে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালে টুইট করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দেশে জঙ্গিদের যে বাড়বাড়ন্ত, যে ভাবে এ দেশটির উপরে ক্রমাগত হামলা চালানো হচ্ছে, তার প্রধান স্থপতি পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক মহলের সামনে এখন ইসলামাবাদ অন্য ভাবমূর্তি তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও বাস্তবটা তো পাল্টে যায় না। আমাদের দেশে পাকিস্তানের যা ভাবমূর্তি, তা-ও পাল্টাবে না।’’
আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনার জন্য এ সপ্তাহেই আমেরিকা যাচ্ছেন পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মইদ ইউসুফ এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফৈয়জ় আহমেদ। এই তৎপরতাকে ‘লোকদেখানি’ বলে মন্তব্য করে আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট টুইট-তোপ— ‘‘পাক সেনাবাহিনী আমাদের দেশে জঙ্গিদের মদত দেয়, হামলার পরিকল্পনা ছকে দেয় এবং অস্ত্রশস্ত্রও সরবরাহ করে। আর এখন টিম বাজওয়া (পাকিস্তান সেনাপ্রধান কমর বাজওয়া) চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে ব্রিটেন ও আমেরিকা তালিবানের পাশে দাঁড়ায়।’’
আফগানিস্তানের সঙ্গে তালিবানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। এর আগে, এ মাসের শুরুর দিকে, আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘‘তালিবানের একটা অন্য রকম ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, এখন তালিবান অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। কিন্তু আদপেই সে রকম কিছু ঘটেনি। আল কায়দা ও ইসলামি স্টেটের ‘আফগান সংস্করণ’ এই তালিবান। পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা তাদের ‘প্রাণের বন্ধু’।’’ কন্দহরের স্পিন বোল্দাক এলাকাতেও তালিবানকে আকাশ পথে হামলা চালাতে পাকিস্তান সাহায্য করে যাচ্ছে বলে এ মাসের শুরুতে দাবি করেছিলেন সালে। এই স্পিন বোল্দাক এলাকাতেই এ মাসের ১৬ তারিখ ভোররাতে আফগান-তালিবান সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন ভারতীয় চিত্রসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি। সে দিনই সন্ধেবেলা আবার ইসলামাবাদে আফগান রাষ্ট্রদূতের মেয়েকে কিছু ক্ষণের জন্য অপহরণ করে তাঁর উপরে অত্যাচার চালানো হয় বলে দাবি করেছিল গনি প্রশাসন। পাকিস্তান এই দাবি অস্বীকার করেছিল। কিন্তু তার পরেই পাকিস্তান থেকে রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে আনে কাবুল।
আফগানিস্তানে জঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে আজই রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, পাক জঙ্গি সংগঠন ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ (টিটিপি)-র প্রায় ছ’হাজার জঙ্গি এখন সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। এ ছাড়া, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আরও হাজার চারেক জঙ্গি রয়েছে আফবানিস্তানে। এই রিপোর্টেই জানানো হয়েছে যে, টিটিপি-র সঙ্গে তালিবানের সম্পর্ক খুবই খারাপ। আফগানিস্তানের পূর্ব প্রান্তে এলাকা দখল নিয়ে টিটিপি-র সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে তালিবানের। গত কাল পাক সেনা থেকে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, তালিবানের তাড়া খেয়ে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়েছে ৪৬ জন আফগান সেনা।