শের মহম্মদ স্তানিকজাই। ছবি: রয়টার্স।
আবার বাংলাদেশ পরিস্থিতির মতো ঘটনা ঘটতে পারে পাকিস্তানে। মঙ্গলবার এই ভাষাতেই ইসলামাবাদকে হুঁশিয়ারি দিলেন আফিগানিস্তানের তালিবান সরকারের উপ-বিদেশমন্ত্রী শের মহম্মদ স্তানিকজাই। আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর পাক নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ১৯৭১-এর পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের দমননীতির প্রতিবাদে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে। যার পরিণতিতে পাকিস্তান ভেঙে আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাঙালি নিধনের পরে এ বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে পাশতুন দমনের। আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার অনুপ্রবেশ এবং মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে পাশতুন জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছিল।
মূলত পাশতুন অধ্যুষিত খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং বালুচিস্তানের উত্তরাংশে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে, ওই অঞ্চলগুলির অধিকার নিয়ে গত কয়েক দশক ধরেই পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মতবিরোধ রয়েছে। ২০২১ সালের অগস্টে কাবুলে তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ নিয়ে দু’দেশের বিরোধ শুরু হয়। সেই সঙ্গে পাক সেনার সঙ্গে লড়াইয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি)-কে কাবুলের মদতের অভিযোগ ঘিরেও দু’তরফের মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসে।
এই পরিস্থিতিতে গত অক্টোবর থেকে পাক সেনা আফগান শরণার্থী বিতাড়ন শুরু করেছে। যা নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হলেন তালিবান মন্ত্রী স্তানিকজাই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সীমান্তের দুই পাশে বসবাসকারী পাশতুনেরা কখনোই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে পৃথককারী ডুরান্ড লাইন (ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের তৈরি সীমান্ত) মেনে নেননি।’’ যা আদতে পাক ভূখণ্ডের উপর তালিবানের দাবি বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
প্রসঙ্গত, ভারতের দেহরাদূনের ‘ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি’ (আইএমএ)-র ১৯৮২-র ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন স্তানিকজাই। তিনি তখন ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত আফগান প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাজিবুল্লার সেনার ‘রংরুট’। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র স্তানিকজাই সফল ভাবে আইএমএ কোর্স শেষ করে কাবুল ফিরে গিয়ে নাজ়িবুল্লার ‘আফগান ন্যাশনাল আর্মি’-তে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে শামিল হয়ে ছিলেন তিনি। নাজ়িবুল্লা সরকারের পতনের পর মুজাহিদ নেতাদের জোট সরকার ‘ইসলামিক লিবারেশন অব আফগানিস্তান’-এর সেনাতেও ছিলেন।
পরবর্তী সময়ে স্তানিকজাই যোগ দিয়েছিলেন তালিবান বাহিনীতে। ১৯৯৬-তে তালিবান যখন প্রথম আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে, সে সময়ও আফগানিস্তানের উপ-বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন স্তানিকজাই। ২০০১-এ আমেরিকার হামলায় তালিবান সরকারের পতনের পরে সাময়িক ভাবে আত্মগোপন করেছিলেন তিনি। ২০১৫-য় কাতারে তালিবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল তাঁকে।