সন্তান কোলে খাতেরা হাশমি। সংগৃহীত ছবি
আর পাঁচটা দিনের মতো সে দিনও কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন খাতেরা হাশমি। ক্লান্ত, অবসন্ন। কিন্তু বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে তিন-চার জন। যাদের দেখেই শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায় আম আফগানের। ওরা তালিবান।
তার পরের ঘটনা এক ঝটকায় বদলে দেয় খাতেরার জীবন। লন্ডভন্ড হয়ে যায় সংসার। সম্প্রতি এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই বিভীষিকাময় দিন মনে করেছেন খাতেরা। জানিয়েছেন, গত বছর কী ভাবে ওই তিন-চারজন তালিবান প্রথমে তাঁকে ছুরি মারে। তার পর সরাসরি মাথায় গুলি! একেবারে শেষে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে বার করে নেওয়া হয় খাতেরার একটি চোখ। মৃত্যু হয়েছে ভেবে তালিবান জঙ্গিরা তাঁকে সেখানেই ফেলে চলে যায়। কিন্তু মারা যাননি খাতেরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে কাবুলের হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি আসেন ভারতে। সেই থেকে এ দেশেই আছেন আফগান পুলিশের প্রাক্তন ওই মহিলা অফিসার। তবে তাঁর সন্তানরা এখনও আফগানিস্তানে।
সাক্ষাৎকারে খাতেরা বলেন, ‘‘এখন প্রতি দিন সকাল-সন্ধ্যায় তালিবান বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বাচ্চাদের বলছে, মা-বাবা না ফিরলে তোমাদের নিয়ে যাব।’’ বিগত ৯-১০ দিন বাচ্চাদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি খাতেরা। কী হল তাদের? তালিবানের ভয়ে লুকিয়ে পড়ল কোথাও, নাকি তালিবানের হাতেই পড়তে হল? চিন্তায় পড়েছেন দুই সন্তানের মা খাতেরা।
নিজের জীবনের আরও একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন খাতেরা। জানিয়েছেন, আফগান পুলিশে কাজ নেওয়া পছন্দ ছিল না খাতেরার বাবার। বাবার বারণ উপেক্ষা করেই নাম লিখিয়েছিলেন পুলিশে। পরবর্তীতে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জানতে পারেন, বাবাও ছিলেন তালিবানের দলে, গোটাটা আগে থেকেই জানতেন। ‘আব্বু’কে ক্ষমা করতে পারেননি খাতেরা। খাতেরা বলছেন, ‘‘তালিবান একই আছে। কোনও বদল নেই। আজও তালিবানের মূল লক্ষ্য মহিলারা। আজও আফগানিস্তানে মহিলাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ বাড়ির বাইরে বেরোন।’’