রাষ্ট্রপুঞ্জের ক্ষোভ, রাশিয়া ও ইউক্রেন, দু’পক্ষই এ দোষে দোষী। ফাইল ছবি।
কারও আঙুল কেটে নেওয়া হয়েছে। কারও হাতটাই নেই। ভেঙে দেওয়া হয়েছে পাঁজর। কয়েক মাসের বন্দিদশায় শীর্ণ-জীর্ণ-কঙ্কালসার চেহারা। কখনও নির্মম অত্যাচার, কখনও যুদ্ধক্ষেত্রে ধরা পড়ার পরেই গুলি। রাষ্ট্রপুঞ্জের ক্ষোভ, রাশিয়া ও ইউক্রেন, দু’পক্ষই এ দোষে দোষী। দু’পক্ষই বিনা বিচারে হয় মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে, না-হলে অত্যাচার চালাচ্ছে যুদ্ধবন্দিদের উপরে।
কিছু দিন আগের ঘটনা। একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায়, রাশিয়ার হাতে বন্দি এক ইউক্রেনীয় সেনা বলছেন, ‘ইউক্রেনের গৌরব’। তার পরেই তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। ভিডিয়োটি দেখিয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলে কিভ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ অভিযানের ইউক্রেন শাখার প্রধান মাটিল্ডা বগনার বলেন, সাম্প্রতিক কালে দু’পক্ষই একই ভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে বিনা বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। অন্তত ২৫ জন রুশ যুদ্ধবন্দি ও আত্মসমর্পণ করা আহত সেনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইউক্রেন। আমরা এর ঘোরতর নিন্দা করছি।’’ কিভে বসে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা বলেছেন বগনার।
গত শুক্রবার এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাতে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করছে, প্রাণনাশের ভয় দেখাচ্ছে, তাঁদের উপরে যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে। রিপোর্টে লেখা হচ্ছে, ‘‘এমন ঘটনাও আছে, যুদ্ধবন্দিদের মারধর করা হচ্ছে। আর চিৎকার করে বলা হচ্ছে, এটা বুচার জবাব।’’ গত বছর কিভের কাছে বুচা শহর দখল করে হত্যালীলা চালিয়েছিল রুশ বাহিনী।
ওই রিপোর্টেই লেখা হয়েছে, এক রুশ যুদ্ধবন্দি জানিয়েছেন, ধরা পড়ার পরে তাঁকে একটি রুক্তমাখা কুড়ুল দেখানো হয়েছিল। এক ঘণ্টা জেরা করা হয়েছিল ওই বন্দিকে। তার মধ্যে ৬ বার বিদ্যুতের শক দেওয়া হয়েছিল।
বগনার বলেন, ‘‘অনেক সময় যুদ্ধক্ষেত্রেই, ধরা পড়ার পরেই, মেরে দেওয়া হচ্ছে শত্রুপক্ষের সেনাকে। ইউক্রেনীয় প্রশাসনের পাঁচটি মামলার তদন্তের দিকে আমাদের নজর রয়েছে। দোষীদের বিচারের কোনও খবর কিন্তু আমাদের কাছে নেই।’’ বগনার জানিয়েছেন, বাখমুটের যুদ্ধ সবচেয়ে ভয়াবহ। দীর্ঘদিন ধরে এই যুদ্ধ চলছে। ক্ষয়ক্ষতি প্রচুর। নির্বিচারে বন্দিদের হত্যার এমন ১১টি ঘটনা ঘটেছে।
মস্কো ও কিভ, দু’পক্ষই একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে। যুদ্ধের গোড়া থেকে দুই দেশের অভিযোগ, বন্দিদের সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘‘যারা আগ্রাসনের শিকার, তাদের দিকেই আঙুল তোলা হচ্ছে! এ মানা যায় না।’’
রিপোর্টে ইউক্রেনীয় বন্দিদের কথাও বলা হয়েছে। রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ইউক্রেনীয় বন্দিরা জানিয়েছেন, তাঁদের উপরে নৃশংস অত্যাচার চালানো হয়েছিল। যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল। খেতে দেওয়া হয়নি দীর্ঘদিন। জল দেওয়া হয়নি। বিনা চিকিৎসায় জখম অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। কয়েক জন ইউক্রেনীয় জানিয়েছেন, বেলচা দিয়ে মারা হত। দেহের বিভিন্ন জায়গায় কোপানো হত। বিদ্যুতের শক দেওয়া হত। কখনও শ্বাসরোধ করা হত। রিপোর্টে আরও লেখা হয়েছে, ‘‘অনেকের দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আঙুল কেটে নেওয়া হয়েছে। কারও পাঁজর ভাঙা। নাক-হাত ভাঙা।’’ এমন এক জন বলেছেন, ‘‘ওরা তো আমাদের মারত না, একেবারে ভেঙে দিত।’’