বেপরোয়া: দেশে রোজ বাড়ছে ওমিক্রন-আক্রান্তের সংখ্যা। তার মধ্যে মাস্ক ছাড়াই স্কেটিংয়ে মজে অনেকে। মঙ্গলবার লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজ়িয়াম চত্বরে। রয়টার্স।
সার্স-কোভ-২। করোনাভাইরাসের এই প্রজাতির চরিত্র বদলের গতির সঙ্গে তাল রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানী এবং গবেষকেরা। তবে এ বার জানা গেল, শুধু মিউটেট করাতেই এই ভাইরাসটির রং বদলের খেলার শেষ নয়, প্রত্যেক ভেরিয়েন্টের সঙ্গে নাকি বদলে যায় ভাইরাসটির উপসর্গের অনুক্রমও! অন্য দিকে, ব্রিটেনের পরে এ দিন ওমিক্রনে প্রথম মৃত্যু খবর শোনাল আমেরিকাও। টেক্সাসের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির টিকার কোনও ডোজ়ই নেওয়া ছিল না বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে প্রশাসন।
আমেরিকার সাদার্ন ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এক অনুসন্ধানে স্ট্রেনের ভিত্তিতে করোনার উপসর্গের ক্রম বদলের বিষয়টি উঠে এসেছে। ‘পিএলওএস কম্পিউটেশনাল বায়োলজি’ নামে এক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষণাটির বিস্তারিত প্রতিবেদন। জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ৩,৭৩,৮৮৩ জন আক্রান্তের উপসর্গের ক্রম পরীক্ষার ভিত্তিতে একটি ‘সায়েন্টিফিক মডেল’ তৈরি করা হয়। যার ভিত্তিতে এই নয়া তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাপত্রের বয়ান অনুযায়ী, করোনা ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক স্তরের সঙ্গে পরবর্তীকালের আক্রান্তদের উপসর্গের ফারাক বিস্তর। যেমন, চিনে যখন প্রথম সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তখন কাশি বা বমি বমি ভাবের মতো উপসর্গেরও আগে জ্বরের লক্ষণ প্রথম দেখা গিয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে কাশি বা অন্যান্য লক্ষণের পরে জ্বর আসতে দেখা যাওয়াটাই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে বলে দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
মূলত ‘ডি৬১৪জি’ স্ট্রেনের কবলে থাকা আমেরিকায় যেমন প্রথম উপসর্গ হিসাবে কাশিরই পাল্লা ভারী। প্রথমে ভৌগোলিক অবস্থানের প্রভাবে এই উপসর্গ বদল বলে ভাবা হলেও পরে ব্রাজিল, হংকং বা জাপানের মতো দেশের মানুষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, এটি আদতে ভাইরাসটির চরিত্র বদলের কারণেই ঘটে। এখনও পর্যন্ত যেটুকু তথ্য তাঁদের কাছে রয়েছে তার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের বক্তব্য, ‘‘করোনাভাইরাসের প্রত্যেক মিউটেশনের পরে উপসর্গের অনুক্রমে বদল ঘটছে। উপসর্গের প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে ‘ডি৬১৪জি’ ভেরিয়েন্টটি সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। কারণ কাশিই এর প্রথম লক্ষণ এবং কাশির মাধ্যমেই ভাইরাসটি সবচেয়ে দ্রুত ছড়ায় বলে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে।’’
অন্য দিকে, আমেরিকায় ওমিক্রনে প্রথম মৃত্যু নথিভুক্ত হওয়ার দিনই জানা গেল ব্রিটেনের পর সে দেশেও এখন সবচেয়ে ‘ডমিন্যান্ট’ বা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে এই স্ট্রেনটি। দেশে মোট করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৭৩.২ শতাংশের শরীরেই ওমিক্রনের হদিস মিলেছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোমর বাঁধছে ওয়াশিংটন। প্রশাসনের তরফে বিনামূল্যে প্রায় ৫০ কোটি কোভিড-১৯ টেস্ট কিট বিতরণ করা হবে বলে খবর। প্রয়োজনে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাড়তি স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে নামানো হবে। বাড়ানো হবে প্রতিষেধক বুথগুলির ক্ষমতাও।
ওমিক্রনের দাপটে ফের সীমান্ত বন্ধের দিকে ঝুঁকছে বহু দেশ। মঙ্গলবার যেমন সীমান্ত খোলার পরিকল্পনা আপাতত পিছিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল নিউজ়িল্যান্ড। ইউরোপ, আমেরিকার পর এশিয়া মহাদেশেও হু হু করে বাড়ছে ওমিক্রন। একটি সেনা ছাউনি থেকে প্রথম ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়েছিল জাপানে, এখন সে দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা ১৮০ তে পৌঁছে গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) অবশ্য এতে আশ্চর্যের কিছু নেই বলেই জানিয়েছে। সোমবার এ প্রসঙ্গে হু প্রধান টেড্রস অ্যাডানাম গেব্রিয়েসাস বলেন, ‘‘ডেল্টার থেকে ওমিক্রন যে অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সম্পূর্ণ টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, এমনকি যাঁদের আগে করোনা হয়ে গিয়েছে তাঁদেরও নিস্তার দিচ্ছে না এই ওমিক্রন।’’