বিজেপির যখন ভোট কমছে, বামেদের ভোটে আর নতুন করে ক্ষয় হয়নি। —ফাইল চিত্র।
বঙ্গে আরও এক দফা উপনির্বাচনে বিজেপির বিপর্যস্ত দশা আরও এক বার প্রকট হল। সচরাচর এ রাজ্যে উপনির্বাচনের ফল শাসক দলসের পক্ষে যায়। সে দিক থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় ‘চমকহীন’। কিন্তু তার মধ্যেও মাদারিহাট বিধানসভা আসন খুইয়ে ধাক্কা খেতে হল পদ্ম শিবিরকে। লোকসভা নির্বাচনের মাসখানেকের মধ্যে উপনির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা ও রায়গঞ্জ হাতছাড়া হয়েছিল বিজেপির। তারও আগে উপনির্বাচনে তারা হেরেছিল শান্তিপুর, দিনহাটা, ধূপগুড়িতে। এ বার উত্তরবঙ্গে একটি আসন হারানোর পাশাপাশি ভোটও কমে গিয়েছে বিজেপির।
চতুর্মুখী লড়াইয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ বার আলাদা করে ময়দানে ছিল বিজেপি, বাম ও কংগ্রেস। বিজেপির যখন ভোট কমছে, বামেদের ভোটে আর নতুন করে ক্ষয় হয়নি। মেদিনীপুর ও তালডাংরা আসনে বামেদের ভোট কিছুটা বেড়েছে। হাড়োয়ায় বিজয়ী তৃণমূলের সঙ্গে অনেক ব্যবধান থাকলেও দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন বাম-সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুল ইসলাম। নৈহাটি আসনে এ বার বামফ্রন্টের সমর্থনে লড়েছিল সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন। সেখানে লোকসভার তুলনায় বাম ভোট অর্ধেক হয়েছে। তবে সার্বিক ভাবে বাম ভোট একই রকম আছে। সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, বিজেপি দুর্বল হলে রাজ্যে দ্বিমেরু রাজনীতির ছবিও বদল হবে। সেই জায়গা নেওয়ার জন্য সাংগঠনিক ভাবে আরও সক্রিয় হওয়ার কথা বলছেন তাঁরা।
বিজেপিতে অবশ্য ‘দুঃসময়ে’ নানা মত রয়েছে দলের অন্দরে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেছেন, “উপনির্বাচনে এই রকম হয়। ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন জিতে বিজেপি সরকার গঠন করবে!” তাঁর সংযোজন, “কালিয়াগঞ্জ দৃষ্টান্ত হতে পারে। সেখানে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জেতার পরে উপনির্বাচনে হেরে গিয়েছিলাম। প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সালে বিজেপি জিতেছিল। ২০২৪ সালেও জিতেছে। আবার ২০২৬ সালে জিতব। উপনির্বাচন দিয়ে বিচার হয় না।” উপনির্বাচনের ফলকে গুরুত্ব দিতে চাননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তাঁর বক্তব্য, “এটা নিয়ে আমরা ভাবিত নই। বাংলায় উপনির্বাচন হয় না। মাদারিহাটে যখন সাধারণ নির্বাচন হবে, বিজেপি ৩০-৪০ হাজার ভোটে জিতবে। নৈহাটি, তালডাংরা ও মেদিনীপুরে ’২৬-এ বিজেপিই জিতবে।”
যদিও বিজেপির একাংশের দাবি, নিচু তলায় দলকে শক্তিশালী করতে না-পারাই ধারাবাহিক ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। শাসক দলের ‘গা-জোয়ারি’র পাশাপাশি অসংখ্য বুথে দলের সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণেও যে এজেন্ট বসানো সম্ভব হয়নি, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের অনেক নেতাই। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বক্তব্যেও কার্যত তার প্রতিফলন শোনা গিয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি একটা জিনিস উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে বলতে পারি যে, নির্বাচনমুখী সংগঠন ও আন্দোলনমুখী দল বা মোর্চা তৈরি করতে হবে। ভার্চুয়াল, ইন্ডোর বৈঠক কম করে রাস্তায় নামতে হবে। কারণ, আমাদের হাতে মাত্র একটি বছর আছে।’’ দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, “প্রচার, রণকৌশল, সংগঠন পুরো প্রক্রিয়ায় কোথায় ভুল হচ্ছে, কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে হবে। সংগঠনে রদবদল হবে। নতুন লোক আসবেন দায়িত্বে। তাঁরা খুঁজে বার করবেন, কোথায় ভুল হচ্ছে। বারবার কেন এই রকম ফল হচ্ছে, এটা তো ভাবনার বিষয়।” রাজ্য বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় থেকে শুরু করে অর্জুন সিংহেরা অবশ্য নির্বাচন কমিশনকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘বাংলায় উপনির্বাচন কী ভাবে হয়, আমরা জানি। তৃণমূলের ভোট বাড়ে না, বাড়ানো হয়! এক লক্ষ ষাট, এক লক্ষ তিরিশ হাজার এই রকম সব ব্যবধান হয়। এর মধ্যে তালডাংরা, মেদিনীপুরে আমাদের ভোট কিছুটা বেড়েছে। হাড়োয়ায় বাম-সমর্থিত আইএসএফ দ্বিতীয়। বেশি কিছু আশা করিনি। বিজেপির ভোট সব জায়গায় কমেছে, এটা মাথায় রেখেই আমাদের কাজ করে যেতে হবে।’’