হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠল পাকিস্তানের পরাচিনার শহর। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
দু’দিন আগে আততায়ীর গুলি ওঁদের ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল। আজ ছিল সেই ৪২ জনের শেষকৃত্য। সাদা কাফনে মোড়া দেহগুলি আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্বজনেরা। আচার বিধি শেষ হওয়ার পরে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠল পাকিস্তানের পরাচিনার শহর।
ঘটনাটি বৃহস্পতিবারের। পাকিস্তানের বিক্ষুব্ধ খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পরাচিনার থেকে পেশোয়ারের দিকে সার দিয়ে যাচ্ছিল গাড়িগুলি। কুররামের কাছে হঠাৎ রাস্তা আটকায় দুষ্কৃতীরা। গাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নেমে এসে নিরস্ত্র মানুষগুলির উপরে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। গুলিবৃষ্টি থেকে মহিলা বা শিশু কেউ রেহাই পায়নি। নিহতেরা সকলেই শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। নিহতদের মধ্যে ৬ জন মহিলা। জখম হয়েছেন আরও ২০ জন। এখনও পর্যন্ত হামলার দায় নেয়নি কেউ।
সে দিনের ঘটনায় ভাইপোকে হারিয়েছেন আলি গুলাম। তিনি বলছিলেন, ‘‘মাত্র চল্লিশ ছুঁয়েছিল ভাইপো। ও খুব সাধাসিধে মানুষ ছিল। কখনও কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখেনি। এ বার ওর পরিবারের কী হবে? ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে কে খাওয়াবে?’’
পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। সংখ্যাগুরু সুন্নিরা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীন বিবাদ আজও চলছে। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমের অঞ্চলগুলিতে প্রায়ই শিয়াদের উপরে হামলা চলে। বিষয়টি নিয়ে আজ পরাচিনার, লাহোর, পেশোয়ার-সহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে শিয়ারা। সরকার বিরোধী স্লোগান ওঠে।
শেষকৃত্যের আগে আজ পরাচিনার শহরে একটি শোকসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে কফিনগুলি আনা হয়। স্থানীয় ভাবে সেখানে বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের শোক পালন চলছে। আজও পরাচিনারে দোকান-বাজার-স্কুল সব বন্ধ ছিল। খালি ছিল রাস্তা-ঘাট। বিচারের দাবিতে ধর্নায় বসেন স্বজনহারা মানুষেরা। পরাচিনারের কাছে কয়েকটি সরকারি চেক পোস্টে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধরা। ফলে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ডাক দেন শিয়া প্রবীণেরা।