হামলাকারীকে সুকৌশলে আটকে দিয়েছিলেন এই আব্দুল আজিজ।
নিউজ়িল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে যখন গুলিবৃষ্টি চালাচ্ছিল আততায়ী ব্রেন্টন, তখন দৌড়ে গিয়ে ওই জঙ্গিকে জাপটে ধরেছিলেন পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদ থেকে আসা নইম রশিদ। নিজে না বাঁচলেও সে দিন বন্দুকবাজের বন্দুক নামাতে বাধ্য করেছিলেন নইম। নইলে মৃতের সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত, তা কেউ জানে না।
গোটা বিশ্বের চোখে নায়ক নইম। তবে নিউজ়িল্যান্ডের এই ভয়াবহ হামলায় উঠে এসেছে আরও অনেক ‘হিরো’-র গল্প। যেমনটা ৭১ বছরের আফগান হাজি দাউদ নবি, যিনি কিনা এক তরুণের প্রাণ বাঁচাতে আততায়ীর বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন নির্দ্বিধায়। তেমনই লিনউডে মসজিদে হামলা চলাকালীন ছোট্ট ক্রেডিট কার্ড মেশিন নিয়ে আততায়ীকে রুখে দেওয়া সেই আফগান শরণার্থী।
সে দিন দুপুরে আল নুর মসজিদে হত্যালীলা শেষ করে লিনউড মসজিদের পথ ধরেছিল জঙ্গি ব্রেন্টন। চলছিল লাগাতার গুলিবৃষ্টি। প্রাথমিক ভাবে আব্দুল আজিজ ওয়াহাবজাদা ভেবেছিলেন কেউ বাজি ফাটাচ্ছে। পরক্ষণেই ভুল ভাঙে। মুখ বাড়িয়ে দেখেন সেনার পোশাক পরা এক বন্দুকবাজ। ভাল-মন্দ ভাবার অবস্থায় ছিলেন না আজিজ। হাতের সামনে আর কিছু খুঁজে পাননি। হঠাৎই চোখে পড়ে একটি ছোট ক্রেডিট কার্ড মেশিন। দু’বার ভাবেননি। সেটা নিয়েই ব্রেন্টনের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নিউজ়িল্যান্ডে বসবাসকারী আফগান শরণার্থী আজিজ। চার ছেলেকে নিয়ে মসজিদে এসেছিলেন প্রার্থনা করতে। সে দিন বন্দুকবাজকে তাক করে সপাটে ছুড়ে দিয়েছিলেন ওই মেশিনখানা। তার পরে গাড়ির পিছনে এসে লুকোন। আজিজ জানান, সে দিন তিনি যে কোনও ভাবে আততায়ীকে ভয় পাওয়াতে চেয়েছিলেন শুধু। যাতে সে মসজিদের ভিতরে না ঢোকে। ঠিক সেই মুহূর্তে মসদিজের ভিতর থেকে ছেলের গলা শুনতে পাচ্ছিলেন আজিজ— ‘‘বাবা ভিতরে এসো প্লিজ।’’
মেশিন গিয়ে লেগেছিল ব্রেন্টনের গায়ে। সঙ্গে সঙ্গে পার্কিং লটের দিকে ছুট লাগায় আততায়ী। এক মুহূর্তে আজিজ ভেবেছিলেন, গাড়ি থেকে আরও অস্ত্র আনতে যাচ্ছে ব্রেন্টন। কিন্তু আততায়ী আজিজকে তাক করে গুলি চালাতে শুরু করে।
হঠাৎই আজিজ লক্ষ করেন, আততায়ীর হাত থেকে পড়ে গিয়েছে বন্দুক। ঝটপট সেটি কুড়িয়ে আততায়ীকে তাড়া করেন আজিজ। বন্দুকের ট্রিগার টানার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেন বন্দুক ফাঁকা। দমেননি তিনি। ফাঁকা শটগান নিয়েই ব্রেন্টনকে তাড়া করেন। কিছুটা হলেও থমকে ছিল আততায়ী। গাড়িতে উঠে পড়েছিল সে। ফাঁকা বন্দুকটাই তার গাড়ির কাচ লক্ষ্য করে ছুড়ে দিয়েছিলেন আজিজ। যদি কাচটা ভাঙা যায়। আততায়ী ভয় পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তাতেও থামেননি আজিজ। তাড়া করতে থাকেন তখনও। শেষমেশ গাড়ি ঘুরিয়ে পালায় আততায়ী। এর পরে মসজিদে ছেলেদের কাছে ফিরে এসেছিলেন আজিজ। শুক্রবার আজিজ না থাকলে মৃতের সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে থামত, ভাবতেও পারছেন লিনউড মসজিদের ইমাম লাতেফ আলাবি। এত কিছুর পরেও নিস্পৃহ আজিজ। বললেন, আমার জায়গায় যে কেউ থাকলে এটাই করত। আমি শুধু আমার কাজটা করেছি মাত্র। ’’