Afghan Army

Afghan National Army: লড়াই হল না কেন! রাগে ফুঁসছেন ভারতে প্রশিক্ষিত আফগান ন্যাশনাল আর্মির তরুণ সদস্য

এহসানের বাবা-কাকারা আফগান সেনায় কাজ করে এসেছেন। বাবার মতোই আফগান সেনায় যোগ দিয়ে ভারতে এসে আইএমএ-তে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান এহসান।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ০৭:০৫
Share:

প্রতিরোধ যদি গড়ে তুলতে পারত আফগান সেনা। ফাইল চিত্র

প্রশিক্ষিত সেনা অফিসার তিনি। দেহরাদূনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি (আইএমএ)-র ‘পাসআউট’। কিন্তু যে সেনার জন্য তিনি প্রশিক্ষণ নিতে আইএমএ-তে এসেছিলেন, সেই আফগান ন্যাশনাল আর্মি আজ কার্যত অস্তিত্বহীন। এক জন আফগান সেনা অফিসার হয়ে তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই না করে দিল্লি পালিয়ে আসা ও বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণে আত্মগ্লানিতে ভুগছেন বছর বাইশের এহসান। এমনকি আঠারো মাসের যে প্রাণপাত পরিশ্রম আইএমএ-তে করেছেন তা আদৌ কাজে লাগবে কি না, সেটা জানেন না তিনি। তাঁর আফশোস, সামান্য লড়াই, প্রতিরোধ যদি গড়ে তুলতে পারত আফগান সেনা, এত সহজে ক্ষমতা দখল করতে পারত না তালিবান।

Advertisement

পারিবারিক ভাবে এহসানের বাবা-কাকারা আফগান সেনায় কাজ করে এসেছেন। বাবার মতোই আফগান সেনায় যোগ দিয়ে ভারতে এসে আইএমএ-তে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান এহসান। আঠারো মাসের প্রশিক্ষণের শেষে গত জুনে যে ৮৪ জন বিদেশি ক্যাডেট পাস করেন। আফগানিস্তানের ছিলেন ৪৩ জন। যার মধ্যে ছিলেন কাবুলের এহসান। প্রশিক্ষণ শেষে কাবুলের বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কিন্তু হেরাটের পতনের পর বুঝে যান, আফগান বাহিনী আত্মসর্মপণের পথে হাঁটা শুরু করেছে। বুঝতে পারেন কাবুলের পতন এখন সময়ের অপেক্ষা। তাই দেরি না করে মা, বোন, ভাইকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে আত্মীয়ের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন এহসান।

আজ লাজপত নগরের কস্তুরবা নগর এলাকায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন এহসান। বললেন, ‘‘যত দিন আমেরিকা পাশে ছিল লড়াই হয়েছে সমানে-সমানে। কিন্তু আমেরিকা সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা হতেই মনোবল ভেঙে যায় আফগান সেনার। তার পর থেকে সামান্য প্রতিরোধও গড়ে তোলেনি আমাদের সেনা। তার ফলে সাত-দশ দিনের মধ্যে পশ্চিমে হেরাট, পূর্বে জালালাবাদ, উত্তরে মাজ়ার-ই-শরিফ ও দক্ষিণে কন্দহরের মতো শহরের পতন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, আফগান সেনারা হয় তাঁদের পোস্ট ছেড়ে চলে গিয়েছেন অথবা স্থানীয় তালিবানের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে প্রাণরক্ষায় সন্ধি করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, লড়াই কেন হল না? আমাদের ধারণা প্রশাসনের কর্তারা তালিবানের সঙ্গে সমঝোতা করে নিয়েছিল। তাই সেনা কোনও প্রতিরোধের রাস্তায় যায়নি। তাই আমাদের পালাতে হয়।’’

Advertisement

অথচ গত কয়েক বছর ধরে আধুনিক অস্ত্র জোগান ও সেগুলি চালানোর প্রশিক্ষণ আফগান সেনাকে দিয়ে আসছিল আমেরিকান সেনা। যাদের ভরসায় আমেরিকা ভেবেছিল অন্তত এক মাস কাবুলকে টিকিয়ে রাখা যাবে। বাস্তবে তা হয়নি।

খাতায় কলমে আফগান সেনার সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ হলেও, আন্তর্জাতিক শিবিরের মতে এদের মধ্যে অন্তত ২৫ শতাংশ যোদ্ধা ভুয়ো। যাদের কেবল খাতায় কলমে অস্তিত্ব রয়েছে। আর ওই ভুয়ো সেনাদের জন্য বরাদ্দ অর্থ যায় রাজনীতিকদের পকেটে। এহসানের মতে, ‘‘দুর্নীতি গোড়া থেকেই ছিল। যা আফগান সেনাকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে।’’

তালিবানের এ যাত্রা ক্ষমতা দখলের পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলেই মনে করেন দিল্লির লাজপত নগরে পালিয়ে আসা আর এক কাবুলের বাসিন্দা মুস্তাফা আকমেদি। তাঁর কথায়, ‘‘অধিকাংশ তালিবান যোদ্ধা পাক-আফগান সীমান্তের কাছে খাইবার পাখতুনখোয়া এলাকার। এই এলাকায় গত ছ’মাস ধরে রেডিয়ো ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধর্মযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ডাক দেওয়া হচ্ছিল। আফগানিস্তানের তখ্‌ত পাল্টানোর জন্য পিছনে থেকে কলকাঠি নেড়েছে ইসলামাবাদ।’’

আপাতত প্রতিবেশী ভারতেই মাথা গুঁজে থাকতে চান এহসান, মুস্তাফা কিংবা চিকিৎসার কাজে আসা ফাইরোজ। মুস্তাফার মতে, ‘‘ভারত বড় দেশ। চাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারত। তা না করলে পড়শির ঘরের আগুনে কিন্তু কাশ্মীরও জ্বলতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement