সেই পর্যটকের চিঠি ও ফিরিয়ে দেওয়া পাথর। ছবি: সমাজমাধ্যম ছবি: সংগৃহীত।
খ্রিস্টীয় ৭৯ সাল। প্রায় দু’হাজার বছর আগের কথা। দক্ষিণ ইটালিতে ভিসুভিয়াস পর্বতের কোলে পম্পেই শহরে তখন ওসকানভাষী মানুষের বাস। এক দিনের ঘটনা— রোজকারের মতোই ব্যস্ত ছিল জনপদ। বাজার-দোকান বসেছিল। মেয়েরা রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিল। বাচ্চারা খেলাধুলোয় মেতেছিল। আচমকাই বদলে গিয়েছিল সব। হঠাৎ জেগে উঠেছিল ভিসুভিয়াস। ভয়াল অগ্ন্যুৎপাতে জীবন্ত পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল বাসিন্দাদের। ছাইয়ে ঢেকে মমি হয়ে গিয়েছিল বহু দেহ। ৪ থেকে ৬ মিটার ছাইয়ের পরতে মাটিচাপা পড়ে গিয়েছিল মৃত জনপদ ও তার ইতিহাস। মাটি খুঁড়ে সেই ‘অভিশপ্ত’ জনপদের খোঁজ মেলে ১৯৬০ সাল নাগাদ। তার পর থেকে এখনও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা চলছে। প্রাচীন শহরের নানা তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। বর্তমানে পম্পেই শহর ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট, জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই শহর দেখতে আসেন। এমনই এক পর্যটকের চিঠিতে চাঞ্চল্য ছড়াল।
পম্পেই ঘুরতে এসে এক মহিলা (পরিচয় জানা যায়নি) কিছু পাথর চুরি করেছিলেন। কেউ সে খবর জানতেন না। আচমকাই তাঁর চিঠি এসে পৌঁছয় পম্পেইয়ের আর্কিয়োলজিক্যাল পার্ক-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তার অফিসে। একটা ছোট নোট ও তার সঙ্গে কিছু পাথরের টুকরো। সেই চিঠিতে লেখা, ‘আমি অভিশাপের কথা জানতাম না। আমি জানতাম না যে আমার ওই পাথরগুলো নেওয়া উচিত নয়। এক বছরের মধ্যে আমার স্তন ক্যানসার ধরা পড়েছে। আমার বয়স কম এবং সুস্থই ছিলাম। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটা স্রেফ ‘কপাল খারাপ’। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন এবং এই পাথরগুলো ফিরিয়ে নিন। মি ডিসপিয়াচে।’ ইটালিয়ান ভাষায় ‘মি ডিসপিয়াচে’ শব্দের অর্থ ‘আমি দুঃখিত’। প্রত্নতত্ত্ববিদ গাব্রিয়েল জ়োহাত্রিগেল তাঁর এক্স-হ্যান্ডলে ওই চিঠি এবং পাথরগুলির ছবি শেয়ার করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রিয় অজ্ঞাতপরিচয় চিঠি-প্রেরক... পাথরগুলি পম্পেই এসে পৌঁছেছে... তোমার ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছা রইল। আমরা ইটালিয়ান ভাষায় বলি— বোক্কা আল লুপো।’
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই অবশ্য বলছেন, ঘটনাটি কাকতালীয়। ক্যানসার-আক্রান্ত মহিলা হয়তো মানসিক ভাবে দুর্বল অবস্থায় রয়েছেন, তাই এ রকম ভাবছেন। দীর্ঘদিন ধরে পম্পেইয়ের ওই মৃত-শহর থেকে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী সংগ্রহ করে ইতিহাস-সন্ধান করে চলেছেন মানুষই। মাটি খুঁড়ে এ পর্যন্ত অনেকগুলি মমি পাওয়া গিয়েছে। সেই সব মমিতে মৃত্যুযন্ত্রণা স্পষ্ট। বীভৎস ওই মমিগুলোকে উদ্ধার করে সংগ্রহশালায় রেখেছেন মানুষই। যদিও ‘দুর্বল’ মন সে সব যুক্তি মানতে নারাজ।
এর আগেও পম্পেইয়ের আর্কিয়োলজিক্যাল পার্ক এ রকম চিঠি পেয়েছে। ২০২০ সালে কানাডার এক পর্যটক কিছু প্রত্নসামগ্রী (দু’টি মোজ়েইক টাইল, একটি পাত্রের অংশ, সেরামিকস-এর টুকরো) ফিরিয়ে দেন। নিকোল নামে ওই মহিলাও ‘অভিশাপের’ কথা বলেছিলেন। তিনিও একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘আমি ইতিহাসের চিহ্ন হিসেবে ওই জিনিসগুলো নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলাম। আমার বয়স কম ছিল, বোকা ছিলাম। সময়ে প্রস্তরীভূত হয়ে যাওয়া ইতিহাসের টুকরো তুলে এনেছিলাম। ওতে অপশক্তি ছিল। মানুষ অত ভয়াবহ ভাবে মারা গিয়েছিল ওখানে, আর আমি ওই ধ্বংসের টুকরো বাড়ি নিয়ে আসি।’ নিকোল জানিয়েছিলেন, ওই জিনিসগুলি আনার পর থেকেই তাঁর ও তাঁর পরিবারের খারাপ সময় শুরু হয়। নিকোলেরও স্তন ক্যানসার হয়েছিল। তাঁকে ডাবল ম্যাসটেকটোমি (দু’টি স্তনই কেটে বাদ দেওয়া) করাতে হয়। তাঁর পরিবার বিপুল আর্থিক সমস্যায় পড়েছিল। নিকোল এখন কেমন আছেন, তা অবশ্য জানা যায়নি।