হিমশীতল অঞ্চলে একটি পাথরের আধারে রাখা ছিল সদ্যোজাতর মমি। দেড় হাজার বছর পরে তা আবার সূর্যের আলোর মুখ দেখল। দক্ষিণ সাইবেরিয়ার আলতাই প্রদেশের খোশ আগাচ জেলার কুরাই গ্রামে চার বছর আগে খননে আবিষ্কৃত হয়েছিল পাথরের শবাধারটি।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, শিশুর দেহটি ইচ্ছাকৃতভাবে মমি করা হয়নি। পাথরের শবাধারাটি বাতাস নিরোধক ছিল। সেইসঙ্গে সাইবেরিয়ার তীব্র ঠান্ডা। সব মিলিয়ে শিশুদেহটি মমিকৃত হয়ে যায়।
অনুমান, মৃত্যুর সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র এক মাস। চামড়ার আবরণে জড়িয়ে তাকে পরম আদরে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল শেষ শয্যায়। তার দু’পাশে উদ্ধার হয়েছে আরও দুটি শবাধার। মনে করা হচ্ছে, সে দু’টিতে তার বাবা মাকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।
সাইবেরিয়ার ওই অঞ্চল শাসন করা কোনও যাযাবর জাতির মানুষের শিশুর দেহ ছিল ওই তিনটি দেহ। অনুমান ঐতিহাসিক ও গবেষকদের। ঠান্ডা আবহাওয়া, বাতাস নিরোধক শবাধার এবং চামড়ার আবরণের থাকায় শিশুটির দেহ পরিণত হয়েছিল মমিতে। তবে তার মাথাটি পাওয়া যায়নি। সেটি সম্ভবত মমিতে পরিণত হয়ে সংরক্ষিত হয়নি। দেহটি শিশুকন্যার নাকি পুত্রশিশুর, তাও জানা যায়নি।
কিন্তু কোন জনজাতির শিশু ছিল সে? নির্দিষ্ট করে বোঝা না গেলেও অনুমান, সে ছিল রহস্যময় বুলান-কোবিনস্কায়া জনজাতির। এই জনধারা থেকেই পরে সৃষ্টি হয়েছিল প্রাচীন হূন জনগোষ্ঠীর। দুর্ধর্ষ যোদ্ধা এই যাযাবর জনজাতির মেয়েরাও অস্ত্রচালনায় দক্ষ ছিল।
এটিলার নেতৃত্ব সংগঠিত হূন জাতি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে। নৃশংস ও দুর্ধর্ষ যোদ্ধা এটিলাকে বলা হয় ‘এটিলা দি হূন’ বা ‘এটিলা দি হান’। ৪৩৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ অবধি একদিকে ইউরাল নদী থেকে রাইন নদী অবধি, অন্যদিকে দানিয়ুব নদী থেকে রাইন নদী অবধি বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিলেন এটিলা। ছবি : সোশ্য়াল মিডিয়া
আনুমানিক ৪০৬ খ্রিস্টাব্দে এটিলার জন্ম আজকের হাঙ্গেরিতে। তবে তাঁর পূর্বপুরুষরা যে খাঁটি ইউরোপিয়ান ছিলেন না, বরং ইউরেশীয় ছিলেন, সে বিষয়ে গবেষকরা সহমত। দু’বার অভিযান চালিয়ে দানিয়ুব নদী অতিক্রম করে বলকান অঞ্চল তছনছ করে দেওয়া এটিলার বাহিনী ছিল রোমান সাম্রাজ্যের সবথেকে বিপজ্জনক শত্রু।
ইতালি আক্রমণ করলেও এটিলা কোনওদিন রোম এবং কনস্তানতিনোপোল জয় করতে পারেননি। রোমান সাম্রাজ্যের মূল দুই ঘাঁটি জয় করার স্বপ্ন অসম্পূর্ণই থেকে গিয়েছিল এটিলার।
৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল এটিলার। তাঁর পরে আর কোনও নেতা হূনজাতিকে একত্রিত করতে পারেননি। ফলে এই যোদ্ধা জাতি ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল।
ভয়ঙ্কর সেই যোদ্ধা জাতির পূর্বসূরি ছিল ওই শিশু? যার জীবন দেড় হাজার বছর আগে ঝরে গিয়েছিল কুঁড়িতেই। অনুমান গবেষক ও ঐতিহাসিকদের। প্রামাণ্য তথ্য পাওয়ার জন্য ডিএনএ অ্যানালিসিস ছাড়া গতি নেই। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ডিএনএ পর্যালোচনা করে তাঁরা জানতে চান মমি হয়ে যাওয়া শিশুর জন্মপরিচয়। পাশাপাশি খতিয়ে দেখতে চান সাইবেরিয়া-সহ মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে যাযাবর জনজাতিদের তখন কী রকম মাইগ্রেশন চলছিল। ছবি : শাটারস্টক