Putin’s Shadow Fleets

নিষেধাজ্ঞায় ফস্কা গেরো, তেল বেচে পকেট ভরাতে বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখাচ্ছে পুতিনের ‘ছায়া নৌবহর’!

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়া ইস্তক রাশিয়ার উপর ১৭ হাজার নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমি বিশ্ব। এই পরিস্থিতিতে লড়াইয়ের খরচ সামলাতে অপরিশোধিত তেল বিক্রির নয়া পন্থা অবলম্বন করেছে মস্কো। সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ক্রেমলিনের ‘ছায়া নৌবহর’।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০২
Share:
০১ ১৮
Vladimir Putin

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়া ইস্তক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত রাশিয়া। মস্কোর উপর রয়েছে ১৭ হাজারের বেশি আর্থিক ও অন্যান্য অবরোধ। তা সত্ত্বেও গত তিন বছর ধরে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে দিব্যি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ক্রেমলিন। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমি বিশ্বের নাকের তলায় ‘তরল সোনা’ সরবরাহের একটি গোপন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তেলের ট্যাঙ্কার ভর্তি তাঁর ‘ছায়া নৌবহর’।

০২ ১৮
Crude Oil (Representative Picture)

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে বিশেষ সেনা অভিযান (স্পেশ্যাল মিলিটারি অপারেশন) চালাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তাঁর সেনাবাহিনী কিভ আক্রমণ করতেই নিষেধাজ্ঞার চক্রব্যূহে মস্কোকে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা করে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জি-৭ ভুক্ত সমস্ত দেশ। পশ্চিমি দুনিয়ার মূল নিশানায় ছিল ক্রেমলিনের হাতে থাকা অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস।

Advertisement
০৩ ১৮
Vladimir Putin

রাশিয়ার রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং রাজস্বের ৪০ শতাংশ আসে অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমি বিশ্বের নেতা-নেত্রীরা ভেবেছিলেন, এক বার সেটা বন্ধ হলেই আর্থিক দিক থেকে কোমর ভাঙবে মস্কোর। তখন যুদ্ধের বিপুল খরচ চালিয়ে যাওয়া ক্রেমলিনের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে লড়াই থামিয়ে তাদের চাপানো যাবতীয় শর্তে রাজি হবেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

০৪ ১৮

কিন্তু, ‘মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক’। লড়াই থামানো তো দূর অস্ত্‌, উল্টে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে অন্য রাস্তা ধরে মস্কো। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং জি-৭ ভুক্ত দেশগুলির সামনেই গোপনে তেল বিক্রি বাড়িয়ে দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এ কাজে ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরনো জাহাজগুলিকে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। জলযানগুলিতে দিব্যি চলছে অন্যান্য পণ্যের পরিবহণও।

০৫ ১৮

যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া সর্বাধিক তেল বিক্রি করেছে চিন, ভারত এবং তুরস্ককে। এর মধ্যে নয়াদিল্লিকে বাদ দিলে বাকি দু’টি দেশের ক্ষেত্রে পুরোটাই চলছে আড়ালে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজ়েশন বা আইএমও) মস্কোর এই ‘ছায়া নৌবহর’-এর অবৈধ কাজকর্মের মোকাবিলায় একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। কিন্তু তাতে তেমন কোনও কাজ হয়েছে, এমনটা নয়।

০৬ ১৮

সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে আইএমও-র আহ্বান ছিল, রুশ পতাকাবিহীন এই ধরনের পুরনো জাহাজগুলির যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে এগুলির চলাচল সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই শনাক্ত করা গেলেই জলযানগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, গত এক বছর চার মাসে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করেনি কোনও সদস্য রাষ্ট্র।

০৭ ১৮

কিভ স্কুল অফ ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে ‘ছায়া নৌবহর’-এর সম্প্রসারণের জন্য হাজার কোটি ডলার লগ্নি করেছে মস্কো। বর্তমানে রাশিয়ার হাতে এই ধরনের ৪০০টি ট্যাঙ্কারযুক্ত জাহাজ রয়েছে বলে মনে করেন ইউক্রেনের আর্থিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের আরও দাবি, এগুলির সাহায্যে দিন দিন তেল সরবরাহ বাড়িয়ে যাচ্ছে ক্রেমলিন। গত বছরের জুন মাসে সেটা দিনে ৪১ লক্ষ ব্যারেলে পৌঁছে যায়।

০৮ ১৮

পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, বর্তমানে ‘ছায়া নৌবহর’কে ব্যবহার করে ৭০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল রফতানি করছে রাশিয়া। বিনিময়ে ৮৯ শতাংশ আমদানি করা পণ্য নিজেদের ঘরে তুলতে সক্ষম হচ্ছে মস্কো। ফলে রাজস্ব কমার বদলে এর মাধ্যমে সেটা বাড়াতে পেরেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

০৯ ১৮

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘ছায়া নৌবহর’ নিয়ে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করেছে ক্রেমলিন। মস্কোর ট্যাঙ্কারবাহী জাহাজগুলি নথিভুক্ত রয়েছে পানামা, লাইবেরিয়া, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, কুক দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্যাবনে। ফলে নিষেধাজ্ঞার বজ্র আঁটুনিকে দিব্যি বুড়ো আঙুল দেখাতে পারছে রুশ পণ্যবাহী জাহাজ। কোনও রকমের ঝুঁকি ছাড়াই সংশ্লিষ্ট দেশগুলির বন্দরে যাচ্ছে তারা।

১০ ১৮

দ্বিতীয়ত, মালবাহী জাহাজগুলির আগে রুশ সরকারি সংস্থা সোভকমফ্লটের মালিকানাধীন ছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সংস্থায় সেগুলিকে স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলিতে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার আঁচ লাগছে না মস্কোর গায়ে। ইউক্রেনের অভিযোগ, এর জন্য একাধিক ভুয়ো সংস্থাও তৈরি করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

১১ ১৮

সমুদ্রে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের সময়ে নাবিকেরা ‘অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম’ বা এআইএস ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করে থাকেন। এর সাহায্যেই ট্যাঙ্কারবাহী জলযানকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। অভিযোগ, গোপনে তেলের ব্যবসা চালিয়ে যেতে এই প্রযুক্তি বন্ধ করে চলাচল করছে রুশ ‘ছায়া নৌবহর’। ফলে কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে সেগুলিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

১২ ১৮

নিষেধাজ্ঞা এড়াতে আরও একটি পন্থা অবলম্বন করছে ক্রেমলিন। তা হল মাঝসমুদ্রে পণ্যের লেনদেন। ‘ছায়া নৌবহর’ থেকে তেলের ট্যাঙ্কার অন্য জাহাজে তুলে দিয়ে সুনির্দিষ্ট বন্দরে ফিরে আসছে সেগুলি। কিভ স্কুল অফ ইকোনমিক্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর এগুলির সাহায্যে রাজস্ব বাবদ অতিরিক্ত ৯৪০ কোটি ডলার আয় করেছে ক্রেমলিন।

১৩ ১৮

বিশ্লেষকদের কথায়, যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমি দুনিয়া নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রুশ অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের নীচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ইউক্রেন জানিয়েছে, গত বছরে তেল থেকে ক্রেমলিনের আয় ২০২৩ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই অঙ্ক প্রায় ১,৬৪০ কোটি ডলার।

১৪ ১৮

রুশ ‘ছায়া নৌবহর’-এর পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি কম নয়। সংবাদ সংস্থা সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ভাবে অপরিশোধিত তেল বিক্রির জন্য মস্কো যে জাহাজগুলি ব্যবহার করছে, তার ৭২ শতাংশ ১৫ বছরের বেশি পুরনো। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ তেল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। দ্বিতীয়ত, বিমা ছাড়া ঝুঁকি নিয়ে বিপদসঙ্কুল সমুদ্রে যাতায়াত করছে এই সমস্ত জাহাজ।

১৫ ১৮

গত বছরের মার্চে ডেনমার্ক উপকূলে একটি জাহাজের সঙ্গে রুশ ‘ছায়া নৌবহর’-এর জলযানের সংঘর্ষ হয়। সেশেলসভিত্তিক সংস্থার মালিকানায় ছিল মস্কোর ওই জাহাজ। তাদের কোনও পর্যাপ্ত বিমাও ছিল না। জাহাজটির অপরিশোধিত তেল বহন ক্ষমতা ছিল সাত লক্ষ ব্যারেল। তবে দুর্ঘটনায় সময়ে পণ্য নামিয়ে সেটি ফিরছিল। ফলে পরিবেশগত বিপর্যয় অল্পের জন্য এড়ানো সম্ভব হয়েছিল।

১৬ ১৮

চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার উস্ত-লুগা বন্দরে ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ট্যাঙ্কারগুলিকে অ্যান্টিগা এবং বার্বাডোজ়ে নথিভুক্ত করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। জলযানটি ১ লক্ষ ৩০ হাজার টন জ্বালানি বহন করছিল বলে জানা গিয়েছে। বন্দর ছাড়ার মুখে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে আচমকা আগুন লেগে যায়। ফলে ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ ঘটে। জাহাজটির মারাত্মক ক্ষতি হলেও নাবিকেরা রক্ষা পেয়েছিলেন।

১৭ ১৮

রুশ ‘ছায়া নৌবহর’-এর সর্বাধিক দাপাদাপি রয়েছে বাল্টিক সাগরে। এই রাস্তা দিয়ে ৫০ শতাংশের বেশি অপরিশোধিত তেল রফতানি করছে মস্কো। কিভ স্কুল অফ ইকোনমিক্সের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছরের এপ্রিলে বাল্টিক সাগর দিয়ে ৯ কোটি ২০ লক্ষ ব্যারেল তেল পরিবহণ করেছে ক্রেমলিনের ‘ছায়া নৌবহর’, যা রাশিয়ার মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮২ শতাংশ।

১৮ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, তেল রফতানির পাশাপাশি ‘ছায়া নৌবহর’কে গুপ্তচরবৃত্তির কাজেও ব্যবহার করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেগুলির উপর ড্রোন হামলা চালানো বেশ কঠিন। কারণ, অধিকাংশ জাহাজে কোনও না কোনও দেশের পতাকা রয়েছে। ফলে সেগুলিকে চিহ্নিত করাই কঠিন। তার পরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলিতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ড্রোন হামলা চালানোর খবর পাওয়া গিয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement