Afghanistan

Afghanistan Crisis: ‘দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তালিবান, বাজছে অদ্ভুত সব গান, দেখছি আর ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি’

যখনই জানলার কপাট ফাঁক করে দেখছি, তখনই চোখে পড়ছে শুধু শুনশান ফাঁকা রাস্তায় তালিবানের পতাকাওয়ালা সাঁজোয়া জিপ, বাইক, গাড়ির ছুটে চলা।

Advertisement

আলেমা আলাওয়াল

কাবুল শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২১ ০৬:১১
Share:

কাবুলের রাস্তায় সাঁজোয়া জিপে তালিবরা। ছবি পিটিআই।

গান শুনে যে এ রকম হাড় হিম হতে পারে, তা কখনও ভাবিনি। অবশ্য যদি একে আদৌ গান বলা যায়!

বাবা-মায়ের মুখে দু’দশক আগের তালিবান যুগের কথা অনেক শুনেছি। তখন আমি নেহাতই শিশু। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে যে আতঙ্ক আর বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে রয়েছি, তা শরীর ও মনে সরাসরি ধাক্কা দিচ্ছে। আর কত দিন মাথা ঠিক রাখতে পারব, সত্যিই জানি না।

Advertisement

আমাদের বাড়িতে ভারী দ্বিস্তর পর্দা দেওয়া জানলা। কপাট বন্ধ। কিন্তু যখনই জানলার কপাট ফাঁক করে দেখছি, তখনই চোখে পড়ছে শুধু শুনশান ফাঁকা রাস্তায় তালিবানের পতাকাওয়ালা সাঁজোয়া জিপ, বাইক, গাড়ির ছুটে চলা। রাতে বাড়ছে তাদের চলাচল। আর দিনরাত তালিব যোদ্ধাদের গাড়িতে-গাড়িতে লাগানো লাউডস্পিকারে বাজছে পুশতু ভাষায় তালিবানি গান। নিজেদের বীরত্ব আর ইসলামিক আইনের গান। জন্নত আর জাহান্নমের কথা। প্রলাপের মতো সুর।

মাঝেমধ্যে জানলা অল্প ফাঁক করলেও, দরজা খুলে বাইরে বারান্দায় পা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। দোকান একটা-দু’টো করে খুলছে কাল থেকে। আজ ভাই গিয়ে রুটি নিয়ে এল। দোকানিরাও ভয়ে কাঁপছেন। ভাইকে বলেছেন, তাঁদেরও জানের (জীবনের) ভয়। কখন কী হয়ে যাবে, কেউ বুঝতে পারছেন না। তাই ঝাঁপ বন্ধ করে সবাই বাড়িতেই ঢুকে আছেন।

Advertisement

দেশের অন্যান্য প্রান্ত যখন তালিবান দখল করে নিচ্ছিল, তখনই কাবুলের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্যাঙ্ক থেকে যে যার মতো নগদ টাকা তুলে নিয়েছেন। ১৪ তারিখ থেকে ব্যাঙ্ক বন্ধ, মেশিনে (এটিএম) টাকা নেই। কবে বেসরকারি ব্যাঙ্ক খুলবে, জানা নেই কারও। এর পরে দোকান খুললেও, খাবার কেনার টাকা থাকবে কি না, তা-ও আমরা জানি না। এর মধ্যেও মায়ের সাহস দেখার মতো। মা পেশায় স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ। ১৫ তারিখের ওই ধুন্ধুমারের মধ্যেই হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। পারেনি অবশ্য। তালিবান মাঝপথেই কটুভাষায় হুমকি দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে। আজ অবশ্য আবার গিয়েছে, সর্বাঙ্গ কালো কাপড়ে ঢেকে। রাস্তায় বেশ কয়েক বার ওরা আটকেছে। কিন্তু হাসপাতালের ডিউটি শুনে শেষ পর্যন্ত যেতে দিয়েছে। মা পৌঁছে ফোনে বলছিল, সরকারি হাসপাতালের অবস্থা লন্ডভন্ড। কার্যত নরক হয়ে রয়েছে। পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মী প্রায় কেউ আসতে পারেননি। তবে আজ থেকে কম সংখ্যায় হলেও, একে একে কর্মীরা যাচ্ছেন। দিন তিনেকের মধ্যে সরকারি অফিসও খোলার নির্দেশ দিয়েছে তালিবান। অন্তত তেমনটাই কানাঘুষো।

আফগানিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা হাতে তালিবান-বিরোধী বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার কাবুলে। ছবি: রয়টার্স

রাতে বাড়ির সামনে গাড়ি চলাচলের আওয়াজ বাড়লে, আমি ভাই, বাবা, মা কুঁকড়ে যাচ্ছি। ঘুম হয় না। তবে এই তল্লাটে এখনও পর্যন্ত কারও বাড়িতে ওরা ঢোকেনি। কিন্তু আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলো থেকে জানতে পারছি, স্থানীয় ইমামদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। অবস্থাপন্ন ব্যবসায়ী বা উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসারদের বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। পেলে, নিয়ে নিচ্ছে। সঙ্গে নিয়ে চলে যাচ্ছে তাঁদের গাড়িও।

আপাতত বাড়ি থেকেই অফিস করছি। কিন্তু মেয়ে বলেই আমাকে নিয়ে বাবা, মায়ের বেশি চিন্তা। দেশ ছাড়ার কথা ভাবছি। কিন্তু উপায় কী? কাবুলে বিমানবন্দরই এখন সব থেকে বিপজ্জনক জায়গা। আমেরিকার সেনারাই নিষেধ করছেন বিমানবন্দরের ধারে-কাছে যেতে। বরং তুলনামূলক ভাবে শহরটা নিরাপদ। আমার বাবার এক পুরনো বন্ধুর বাড়ির অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। একটা পুরনো গাড়ি আছে। তা চালিয়ে দিন গুজরান করতেন। গত সোমবার প্রাণ বাঁচাতে যখন হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরের দিকে ছুটছেন, তখন উনিও গাড়ি নিয়ে কিছু পরিচিতকে ছাড়তে গিয়েছিলেন। বিমানবন্দরের মুখে গুলি খেয়ে মাথার ঘিলু নাকি বসার সিটে ছিটকে পড়েছে। এটা শোনার পর থেকে আমরা সত্যিই কেঁপে গিয়েছি। এখন ওঁদের পরিবারের সংস্থান কী ভাবে হবে, কেউ জানেন না।

(কাবুলে বহুজাতিক অসরকারি সংস্থায় কর্মরত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement