শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
নয়াদিল্লি সফরে আসা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তথা কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বার্তা দিল, আঞ্চলিক সুস্থিতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিএনপি-জামাত জোট বিপজ্জনক। পাকিস্তানের সঙ্গে জামাত এবং কিছু মৌলবাদী সংগঠনের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বকে।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের এই দল। তাঁরা দেখা করেছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গেও। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আরমা দত্ত ও অধ্যাপক মেরিনা জাহান।
বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব তথা মন্ত্রীদের সঙ্গে কী কথা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজ্জাক বলেন, “আমরা ভারতকে এটাই বলেছি যে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উভয় রাষ্ট্রের জন্যই খুব জরুরি। বাংলাদেশের মাটি যে কোনও ভারতবিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না, শেখ হাসিনার সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” রাজ্জাকের বক্তব্য, “বিজেপি নেতৃত্ব আমাদের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী শিবির বা সংগঠনের পক্ষ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” মৌলবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত ও বাংলাদেশ গোয়েন্দা-তথ্যের সমন্বয় করে চলে বলেই রাজ্জাকের বক্তব্য। মোদী সরকারের সময়েই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে এক সোনালি অধ্যায় তৈরি হয়েছে বলেও আজ দাবি করেন রাজ্জাক। চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বক্তব্য, চিন বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অংশীদার ঠিকই। কিন্তু তা নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তাঁদের দল চিন নিয়ে ভারতের সতর্কতা ও স্পর্শকাতরতাকে গুরুত্ব দেয়। মুক্তিযুদ্ধে চিন ও আমেরিকা যে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, তা-ও মাথায় রেখে চলেন লীগ নেতৃত্ব।
আজ পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও উন্নয়নমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে গয়াল উপমহাদেশের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপরে গুরুত্ব দেন। তাঁর বক্তব্য, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। খাদ্যশস্য রফতানির উপরে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে গয়াল প্রতিনিধিদলকে বলেন, খাদ্যশস্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, ভারত সক্রিয় ভাবে তা বিবেচনা করবে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য-ব্যবধান কমাতে ভারত যাতে বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করতে পারে, সে জন্য তিনি প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আরও পণ্যের নাম প্রস্তাব করার অনুরোধ জানান। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পচনশীল পণ্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও আলোচনা হয়।