আজ়াজ়ের বিস্ফোরণস্থলে চলছে উদ্ধারকাজ। রবিবার। সিরিয়ায়। ছবি: রয়টার্স।
রমজান মাস। তুরস্কের সীমান্ত ঘেঁষা উত্তর সিরিয়ার আজ়াজ় শহরের বাজার এলাকায় লোকজন ছিল ভালই। আজ সকালে ব্যস্ত বাজারে আচমকাই একটি গাড়ি-বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। অন্তত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০ জনেরও বেশি জখম। এখনও পর্যন্ত কেউ এই হামলার দায় নেয়নি।
আলেপ্পো প্রদেশের আজ়াজ় শহরটি তুরস্ক-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে এরা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। তা ছাড়া, তুরস্ক সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তুরস্কের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণও রয়েছে। যে সময়ে আজ়াজ়ের বাজার এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটে, সে সময়ে ভাল ভিড় ছিল। উৎসবের দিন। সামনে ইদ-উল-ফিতর। লোকজন নিজেদের জন্য, ছেলেমেয়ের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনছিলেন। ‘দ্য হোয়াইট হেলমেটস’ নামে সিরিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানিয়েছে, বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে দু’টি শিশু রয়েছে। বিস্ফোরণস্থলের বেশ কিছু দৃশ্যের ছবি ছড়িয়েছে ইন্টারনেটে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ ছড়িয়ে রয়েছে চারদিকে। রক্তস্রোত রাস্তায়। আশপাশে বাড়ি, দোকানপাটও ক্ষতিগ্রস্ত। একটি ব্রিটিশ নজরদারি সংস্থাও জানিয়েছে, যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বিস্ফোরণে। আগুন ধরে যায় বিস্ফোরণস্থলে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ ভাবে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। সে সময়ে কার্যত গায়ের জোরে আন্দোলন দমন করে আসাদ-সরকার। এর পরে বিদ্রোহ গৃহযুদ্ধের আকার নেয়। জিহাদি গোষ্ঠীদের সমর্থনে চলে আসে বিদেশি বাহিনীও। সেই যুদ্ধে ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরহারা হয়। দেশের সার্বিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে। শিল্প সংস্থান অকেজো হয়ে যায়।
আজ়াজ় শহরটি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘাঁটি। এরা বাশার আল-আসাদের প্রতিপক্ষ। সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলা সরকার-বিরোধী বিদ্রোহের পরে এই ‘সরকার’ দাবি করে, তারাই ‘আসল’ এবং সিরিয়ার বৈধ শাসক। যুদ্ধ-বিশেষজ্ঞদের মতে, কৌশলগত দিক থেকে আজ়াজ় শহরের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি পরিষেবার দিক থেকেও এই শহরের তুরস্কের কাছাকাছি হওয়া তাৎপর্যপূর্ণ। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাস-হামলা অপরিচিত ঘটনা নয়। ২০১৭ সালে এই রকমই এক গাড়ি-বোমা হামলায় ৪০ জন প্রাণ হারান। সে বারে হামলার দায় নিয়েছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে অল্প সময়ের জন্য এই অঞ্চল আইএসের কবলে ছিল।