ইজ়রায়েলি পার্লামেন্টে ৬৪ জন সদস্যের মধ্যে ৫৬ বিলের পক্ষে সায় দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত।
তীব্র প্রতিবাদ, আন্দোলন আর বিক্ষোভের মধ্যেই বিচার ব্যবস্থার সংস্কার সংক্রান্ত বিতর্কিত সেই বিল প্রাথমিক ভাবে পেশ করা হল ইজ়রায়েলি পার্লামেন্টে। গত কাল রাতে সেই বিল ভোটাভুটিতে গেলে পার্লামেন্টের ৬৪ জন সদস্যের মধ্যে ৫৬ বিলের পক্ষে সায়ও দিয়েছেন। তার পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল জেরুসালেম, তেল আভিভ-সহ ইজ়রায়েলের বেশ কিছু শহর।
ওই বিল পেশের প্রতিবাদে কাল গভীর রাতেই পার্লামেন্ট ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন কিছু বিক্ষোভকারী। তাঁদের আটক করে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তেল আভিভ-জেরুসালেম সড়ক অবরুদ্ধ করে টায়ার জ্বালিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ নাগরিকেরা। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশকে পরিস্থিতি সামলাতে হয়। ওই এলাকা থেকে অন্তত ৪২ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি।
যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত গত জানুয়ারি থেকে। গত বছর ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফের প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেন। এ বার তাঁর সরকারকে সমর্থন করছে অতি দক্ষিণপন্থী ও অতি রক্ষণশীল কিছু দল। এত দক্ষিণপন্থী সরকার এর আগে দেখেনি ইজ়রায়েল। সেই জোট সরকার দেশ শাসন শুরু করার পর পরই ইজ়রায়েলের গোটা বিচার ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কথা ঘোষণা করেন নেতানিয়াহু। বিরোধীরা তখনই বলতে শুরু করেছিলেন, আদতে বিচারপতিদের ক্ষমতা খর্ব করে শাসক দলের মন্ত্রীদের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য এই সংস্কার করা হচ্ছে। নতুন ব্যবস্থায় মন্ত্রীদের কোনও সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার অধিকার থাকবে না বিচার বিভাগের। বিরোধীদের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষও পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তখন থেকেই নিয়মিত ভাবে সপ্তাহান্তে বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ।
আন্তর্জাতিক ভাবেও কোণঠাসা হতে শুরু করেছিলেন নেতানিয়াহু। বন্ধু দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও নতুন এই বিলের সমালোচনা করেছিলেন। চাপে পড়ে তখনকার মতো বিল আনা স্থগিত রেখেছিলেন নেতানিয়াহু। কিন্তু তাঁর শরিক দলগুলি ক্রমাগত এই সংস্কারের জন্য চাপ দিতে থাকে। আলোচনার রাস্তা খোলা রাখার কথা বলে সেই বিল পার্লামেন্টে আনেন নেতানিয়াহু।
বিরোধীদের অবশ্য আরও বক্তব্য, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নিজের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আরও বেশি করে এই নতুন বিল আনতে চাইছেন। নেতানিয়াহু যদিও কিছু দিন আগে পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, এই নতুন সংস্কারের সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলির কোনও সম্পর্ক নেই।