জ্যাক কামিংস, আফগানিস্তানে কর্তব্যরত অবস্থায়। নিজস্ব চিত্র।
আফগানিস্তানে পালাবদলের ঢেউ জোরাল ধাক্কা দিল একদা সেখানে লড়াই করা ব্রিটিশ ফৌজিদের। কাবুলের শাসকের চেহারা বদলের খবর পেয়ে আক্ষেপ ঝরে পড়েছে আফগান যুদ্ধে জখম হওয়া তাঁদের গলায়। আফগানিস্তানের ল়ড়াইয়ে অংশ নিয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন অনেকে। প্রাণে বাঁচলেও অনেকের হাত-পা বাদ দিতে হয়েছে অস্ত্রোপচার করে। এখন তাঁদের কারও কারও প্রশ্ন, ‘‘এই দিন দেখার জন্যই কি সব হারালাম?’’
ইরাক যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহের উপর নির্ভর করে হলিউডে তৈরি হয়েছিল ‘হার্ট লকার’। একদা আফগানিস্তানে কর্তব্যরত ব্রিটিশ সেনা জ্যাক কামিংসের জীবনের সঙ্গে তার অনেক মিল রয়েছে। তিনি প্রাণ হারাননি বটে, কিন্তু বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল তাঁর দু’টো পা-ই। সেটা ২০১০ সাল। সেই ঘটনার ১১ বছরের মাথায় তালিবানদের হাতে কাবুলের পতনের খবর পেয়ে নিজেকে সামলাতে পারছেন না জ্যাক। এখন তাঁর আশ্রয় হুইল চেয়ার। তাঁর আক্ষেপ, ক্ষোভ, রাগ— সবকিছু আছড়ে পড়েছে নেটমাধ্যমে। টুইটারে জ্যাক লিখেছেন, ‘এত কিছু হারানোর মূল্য কি এই? আমি কি আমার পা হারিয়েছি এই জন্য? এখন তেমনই মনে হচ্ছে। আমার বন্ধুদের প্রাণ দেওয়া কি বিফলে গেল! সেই বিস্ফোরণের ১১ বছরের মাথায় এটা একটা নিষ্ঠুর পরিণতি। কারও নাম উচ্চারণ করতে পারছি না। আমার মাথায় ক্রোধ, বিশ্বাসঘাতকতা, দুঃখ নানা আবেগ খেলা করছে।’
সংবাদমাধ্যমকে জ্যাক জানিয়েছেন তাঁর আক্ষেপের কথা। দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে দেখা হলে কী বলবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে জ্যাকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এটাই কি পা হারানোর মূল্য? তিনি (বরিস জনসন) বলেন, ব্রিটিশ সেনার মৃত্যু বিফলে যাবে না। কিম্তু আমার মনে হয় না এটা উনি এক পুত্রহারা মা, বাবা অথবা স্বামীহারা স্ত্রীকে সামনাসামনি বলতে পারবেন।’’ গত দু’দশকে দেড় লক্ষ ব্রিটিশ সেনা পা রেখেছিলেন আফগানিস্তানে। তার মধ্যে ৪৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এর পাশাপাশিই জ্যাক জানিয়েছেন, দেশের সেবা করতে পেরে তিনি গর্বিত। কাবুলে কাটানো দিনগুলির স্মৃতিচারণ করে জ্যাক বলছেন, ‘‘আমি সত্যিই মনে করি, আমি আফগানিস্তানে যা করতাম, তার সঙ্গে অন্য কোনও কাজের তুলনা হয় না। আমি বিস্ফোরক খুঁজে বার করতাম। আমার খুঁজে পাওয়া একেকটা বোমা বিস্ফোরণ হলে মানুষের জীবন চলে যেত। আমার খুঁজে-পাওয়া প্রতিটি বোমায় মানুষের জীবন লেখা ছিল। কিন্তু এই তালিবানরা ভয়ঙ্কর।’’